নতুন ধারার জেএমবি অনেক বেশি শক্তিশালী
আজাদ হোসেন সুমন : শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের জেএমবির চেয়ে নতুন ধারার জেএমবি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। মেধা ও তারুণ্যের সমন্বয়ে এরা স্বল্প সময় এবং স্বল্প লোকবল দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও বুয়েট শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এরা দলে টানছে। গ্রেফতার করা চার নারী জঙ্গি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরও ১০ নারীর নাম বলেছে। তাদের অধিকাংশই ছাত্রী ও শিক্ষকতা পেশায় জড়িত বলে পুলিশ ধারণা করছে। গ্রেফতার ৪ নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর জঙ্গি কর্মকা- ও নাশকতামূলক তৎপরতার বিষয়ে নগরীর বিভিন্ন আস্তানায় গিয়ে দীক্ষা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
নারী জঙ্গিদের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছিলেন মাহমুদুল ওরফে তানভির। তানভিরকে গত ২১ জুলাই র্যাব গ্রেফতার করলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আল মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফামের্সি বিভাগের শিক্ষার্থী আকলিমা রহমান মনি, ইশরাত জাহান মৌসুমী, খাদিজা পারভিন মেঘলা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিস চিকিৎসক ইবতিসনা আক্তার ঐশীকে গ্রেফতার করা হয়। এদের কাছ থেকেও পুলিশ বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত আরও ১০ তরুণী হচ্ছে- তাসনুভা ওরফে তাহিরা, মায়মুনা ওরফে মাহমুদা ওরফে লায়লা, সারিহা ওরফে মিতু, মনিরা জাহান ওরফে মিলি, সাফিয়া ওরফে সানজিদা ওরফে ঝিনুক, শায়লা ওরফে শাহিদা দিনাত জাহান ওরফে নওমী ওরফে বানী, তানিজলি ওরফে মুন্নী, আলিয় ওরফে তিন্নি ওরফে তিতলী, সালেহা ওরফে পুতুল ও মনিরা জাহান ওরফে মিলি। এ ১০ জন এখনো পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র মতে, এদের টার্গেট ছিল নিজেদের নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত করা। বিশেষ করে বুয়েট, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপেক্ষাকৃত দুর্বল চিত্তের এবং নামাজ-কালামের দিকে ঝোঁক আছে এমন মেধাবীদের টার্গেট করা এবং দলে ভেড়ানো। কিন্তু তার আগেই র্যাবের অভিযানে ভেস্তে গেছে তাদের মিশন।
উল্লেখ্য, মওলানা মহিউদ্দিন নামে এক জঙ্গি হিজবুত তাহরিরের সমন্বয়ক হিসেবে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্রদের টার্গেট করে দলে টানছিলেন। কিন্তু তিনি গোয়েন্দা জালে আটকে পড়েন আরও প্রায় ২ বছর আগে। যদিও এ জঙ্গি নেতা ৬ মাসের মাথায় জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
পুনরায় এ দায়িত্ব নব্য জেএমবির পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন তানভির। সে অনেকটা অগ্রসর হয় এবং বেশ কিছু সদস্য সংগ্রহে সক্ষম হয়। কিন্তু মিশনের একপর্যায়ে তিনিও র্যাবের গোয়েন্দা জালে আটকে পড়েন। ২১ জুলাই গ্রেফতার হওয়ার পর তার কাছ থেকে র্যাব এসব তথ্য পায়। ৪ নারী জঙ্গি, ১০ তরুণীর নাম, পরিচয় পর্ব, দীক্ষা ও নীল নকশার যাবতীয় তথ্য এখন র্যাব ও গোয়েন্দাদের হাতে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, নব্য জেএমবি সিরিয়ায় থাকা বাংলাদেশি জঙ্গিদের নির্দেশনা অনুযায়ী নাশকতা বাস্তবায়ন করে। নাশকতার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারীরা বয়সে তরুণ, তারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া অবস্থাসম্পন্ন ঘরের সন্তান এবং মেধাবী। তারা তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ ও উচ্চ ধারণা রাখে। র্যাব সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া তানভির ও চার নারী জঙ্গির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা অগ্রসর হচ্ছে। ফলে তছনছ হয়ে যাচ্ছে জঙ্গিদের নানা মিশন। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি