
আমাদেরও একটি অলিম্পিক পদক চাই
শেখ মিরাজুল ইসলাম
রিও অলিম্পিকে আমাদের অর্জনের ঘর শূন্য থাকবে তা জানা কথা ছিল। যাকে নিয়ে সামান্য আসা ছিল সেই সেলিব্রেটি গলফার সিদ্দিকুর জানালেন, অলিম্পিক আসরে না এলে তার মান যে কোন দুনিয়ায় তা জানা হতো না। সোজা বাংলায় তিনি পদক জেতার মতো কোনো মানদ-েই পড়েন না গলফের বিশাল ভূবনে। বাকিদের আলাপ নাই বা করলেন। তারা হেসে-খেলে হিটেই বাদ পড়ে গেছেন, মূলপর্ব তাদের জন্য যেন ‘দিল্লি হনুজ দূর অস্ত’।
সেই হিসেবে প্রতিবেশি দেশগুলোর অবস্থাও ততটা ভালো নয়। খেলাধুলার পেছনে ভারত যতটুকু অর্থ-শ্রম ব্যয় করে, সে হিসেবে চীন-জাপানের মতো তাদের অবস্থান বিশ্বে ক্রীড়া মঞ্চে এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে ভারতীয় নারী ক্রীড়াবিদরা দ্রুত উঠে আসছেন তার নমুনা এবারের অলিম্পিকে পাওয়া গেছে। সেটাই তাদের জন্য বিশেষ প্রাপ্তি।
এবারের অলিম্পিকে ভারতের প্রথম পদক মেয়েদের ৫৮ কেজি বিভাগের ফ্রি-স্টাইল কুস্তিতে হরিয়ানার সাক্ষী মালিক এনে দেন। প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীর হিসেবে ব্রোঞ্জ জেতা ছাড়াও বলিউডে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সালমান খানের ‘সুলতান’ সিনেমার আবেদনও যেন তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন বহুগুণ। সিনেমার সুলতান আর অলিম্পিক রিং-এর সাক্ষী দুজনেই হরিয়ানার কুস্তিগীরদের ঐতিহ্যের গল্প রূপালী পর্দায় আর কঠিন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। আমাদের সেই রকম কোনো প্রেরণাদায়ী গল্প নেই। ওই এক কলসিন্দুর গ্রামের উঠতি কিশোরী ফুটবলাররা কি পারবেন আমাদের নতুন কোনো চমক উপহার দিতে?
একইভাবে উপমহাদেশে সবার শীতকালের প্রিয় খেলা ব্যাডমিন্টনে প্রথম রূপা জিতলেন পি ভি সিন্ধু নামের একুশ বছরের কিশোরী। অলিম্পিকে এটা ভারতের অন্যতম সেরা অর্জন। মুহূর্তে মনে পড়ে গেল আমাদের দেশেও মহিলা ব্যাডমিন্টনে প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাধর খেলোয়াড় ছিলেন। যথাযথ পরিশীলনের অভাবে তারা আজ স্রেফ হারিয়ে গেছেন।
শুধু তাই নয়, মেয়েদের জিমন্যাস্টেও ভারতের বাঙালি মেয়ে দীপা কর্মকার পয়েন্টে চতুর্থ স্থান অধিকার করে পদক বঞ্চিত হন। কিন্তু তার মধ্যেই তারা আশা জাগানিয়া ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছে। আবারো একই সূত্রে আমরা জানলাম, রাশিয়ার রিদমিক জিমন্যাস্টিকের চ্যাম্পিয়ন মার্গারিতা মামুন নামের মেয়েটি বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত। তার বাবা রাজশাহীর, মা রাশিয়ান। জুনিয়র পর্যায়ে মার্গারিতা ওরফে রিতা বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা গায়ে জড়ালেও পরবর্তীতে রাশিয়ার পক্ষে অংশগ্রহণ করে বিশ্বমঞ্চে নিজেকে তুলে ধরে। বোঝাই যায়, এদেশে থাকলে তার জিমন্যাস্ট হবার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতো।
ছোট্ট এই কয়টি তুলনামূলক উদাহরণে আমরা কী বুঝলাম? দেশ ভৌত অবকাঠামোগত বিবেচনায় এগিয়ে যাচ্ছে তা ঠিক। ফ্লাই-ওভার, মেট্রোরেল কিংবা পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের প্রজন্মের শারিরীক ও মানসিক সক্ষমতা কি দিন দিন নিম্নমুখী হতেই থাকবে? সুস্থ-সবল জাতি হিসেবে কি গর্ব করতে পারব না? আমরা এভাবে আকৃতিগতভাবে দুর্বল জাতির তকমা যেভাবে অলক্ষ্যে গায়ে লাগাচ্ছি, হারু পার্টির পদক পেয়েই যাচ্ছি তার দিকে কি কারও ভ্রুক্ষেপ আছে?
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন
