ফরিদুন্নাহার লাইলী
ভয়াল বিভীষিকাময় রক্তাক্ত ২১ আগস্ট আজ। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। সভ্য জগতের এক অকল্পনীয় নারকীয় হত্যাকা- চালানো হয় ২০০৪ সালের এই দিনে। গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গন এদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে।
হিংস্র শ্বাপদের ভয়াল ছোবলে সেদিন মানবঢাল রচনা করে নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা করতে পারলেও ওই নৃশংস হামলায় ঝরে পড়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪টি তরতাজা প্রাণ। আহত হওয়া পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর অনেকেই ঘাতক গ্রেনেডের স্পিøন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়েই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে। হাত-পা-চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করে জীবনযাপন করছেন।
শোকাবহ আগস্ট মাসেই আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর টার্গেট থেকে ঘাতক হায়েনার দল গ্রেনেড দিয়ে রক্তস্রোতের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল সেদিন সমাবেশস্থলে। টার্গেট ছিল এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশুন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতেই ঘাতকরা এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। জাতির সামনে আবারও স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধস্পৃহা।
বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময়ই খোদ রাজধানীতে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে চালানো হয়েছিল এই ভয়াল ও বীভৎস গ্রেনেড হামলা। ওই সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই যে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তা তদন্তে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসেছে। এই লোমহর্ষক গ্রেনেড হামলার ঘটনা ধামাচাপা, ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও আলামত নষ্টসহ হেন কোনো কাজ নেই যা করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। হাওয়া ভবনে বসে তখন ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানোর ঘটনা এখনও দেশবাসীর মুখে মুখে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, হামলা ছিল সুপরিকল্পিত এবং তা তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের মূল ব্যক্তিদের একেবারে অজান্তে ঘটেছে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন বৈকি। জাতীয় নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এই নির্মম ট্র্যাজেডির বিচার কাজ দ্রুত নিষ্পন্ন হোক সেই প্রত্যাশা করছি।
লেখক : সাবেক সাংসদ। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন