
২১ আগস্ট ঘটনায় খালেদা-নিজামীর প্রত্যক্ষ মদত
ড. মিল্টন বিশ্বাস
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের ত্রিশ বছর পরে সেই আগস্ট মাসেই আবারও গণহত্যার ঘটনা ঘটে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট তথা খালেদা-নিজামীর নীলনকশা আর জঙ্গিবাদ উত্থানের ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় তিনশোর বেশি নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন; নিহত হন আওয়ামী মহিলা লীগের নেতা ও সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় করা গ্রেনেড হামলার সেই ঘটনার ভয়াবহতা আমাদের হতবাক করে দিয়েছিল। পরের বছর ঠিক একই মাসের ১৭ তারিখে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ ও নিহত মানুষের স্বজনদের আর্তনাদ এবং আহত মানুষের কান্নায় আমাদের মনে ক্ষোভ ও ঘৃণা আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বোমা হামলার ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো শুরু হয়েছিল তারও আগে থেকে। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরের টাউন হল মাঠে উদীচীর সমাবেশে এক বোমা হামলায় নিহত হয় ১০ জন। একই বছর ৮ অক্টোবর খুলনার নিরালা এলাকায় অবস্থিত কাদিয়ানীদের উপাসনালয়ে বোমা বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত হয়। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলায় ৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসবে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় ১১ জন। ৩ জুন বোমা হামলায় গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় সকালের প্রার্থনার সময় নিহত হয় ১০জন; আহত হয় ১৫ জন। সিলেটে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়া নিহত হন গ্রেনেড হামলায়। ২০০৪ সালের ২১ মে হযরত শাহ জালাল (রহ.) মাজার পরিদর্শনে গেলে গ্রেনেড হামলায় আহত হন তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার হোসেন; যিনি সিলেটি বাংলাদেশির সন্তান। এছাড়াও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশে, অফিসে, নেতার গাড়িতে, সিনেমা হলে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। অথচ ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের তৎপরতা বন্ধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। হামলা প্রতিরোধ ও জঙ্গি দমনে তৎকালীন সরকারের নিষ্ক্রিয়তা জঙ্গিবাদ উত্থানে সহায়ক হয়ে উঠেছিল; ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় খালেদা-নিজামী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বর্তমানে আরও স্পষ্ট হয়েছে।
সে সময় খালেদা-নিজামী জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কমিটি করে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল; নষ্ট করা হয়েছিল গ্রেনেড হামলার সকল আলামত। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে জজ মিয়াদের কোনো দোষ খুঁজে পায়নি। বরং ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৫২ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হলে প্রকৃত অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। প্রধান আসামিদের তালিকায় নাম রয়েছেÑ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ, সাবেক উপমন্ত্রী পিন্টু, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান প্রভৃতি। এদের ভাই ও সঙ্গীদের অনেকেসহ হুজি নেতাদের সংশ্লিষ্টতা এখন প্রমাণিত সত্য। অর্থাৎ একদিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলা অন্যদিকে জঙ্গিদের সঙ্গে তৎকালীন জোট সরকারের সুসম্পর্ক বর্তমানের তথাকথিত ২০ দলীয় বিরোধীদের রাজনীতির ভয়ানক চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে। খালেদা-নিজামীরা যে খেলায় মেতেছিল সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বর্তমান সরকারের আমলে। মানুষের আস্থা বেড়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর। আর এজন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এদেশ সফরে এসে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থানের প্রশংসা করে গেছেন।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন
