
শেখ হাসিনা : ন হন্যতে
শেখ হাসিনা আছেন, আছেন এ ভরসায় দেশের প্রগতি এখনও নিদ্রা যেতে পারে। যে যাই বলুক, তিনি না থাকলে আওয়ামী লীগও একক দল থাকবে না। থাকবে না রাজনীতির মনোবল। তার সবকিছু ভালো লাগে এমন না। তিনি বেশি বলেন। সোজা-সাপটা বলেন। যা বলার দরকার নেই তাও বলেন। সেগুলো মানি না বলে কি তার উজ্জ্বলতাও মানবো না?
একুশে আগস্টে তাকে যারা মারতে চেয়েছিল তাদের কারণে এদেশ এখনও বিভক্ত। এরাই বাংলাদেশকে বিভাজিত করে রেখেছে। এরা চায় দেশ একটি ককটেল নীতিতে চলুক। পাকি ভাবধারা, খুনের রাজনীতি আর সাম্প্রদায়িকতার আড়ালে এরা যে বাংলাস্তান বানাতে চায় তার পথের কাঁটা শেখ হাসিনা। সে কারণে তারা তাকে মারতে চেয়েছিল। যে বা যারা মিডেল ক্লাস সেন্টিমেন্টে তার বিরোধী, তাদের মূলে যান দেখবেন কারণ একটাই। পাকিস্তান ভাঙনের প্রতিশোধ।
সরকার কেউ একা চালায়? এ কথা যেসব শিক্ষিত জনেরা ভালো জানেন তারাই শেখ হাসিনার সমালোচক। তারা যেকোনো ভাবে তার বেঁচে থাকাটাকেই মানতে চায় না। কত রকমের আলোচনা। না পারলে দুই নেত্রীকেই এককাতারে এনে বলবে, দুজনকেই মেরে ফেলা দরকার। এরাই একুশে আগস্টের খুনিদের প্রেরণা। এরা না থাকলে কোনো যুবরাজের সাহস হতো না অমন কাজ করার।
একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলাই এদেশের প্রথম বড় জঙ্গি হামলা। সে হামলায় আইভি রহমানসহ কত মানুষের জীবন গেল। রাজধানীর রাজপথে বিরোধীদলের নেত্রীকে উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিচার করেছিল সেই সরকার? তার বদলে আমরা দেখলাম, বিচার প্রহসন। জজ মিয়ার নাটক। আর এরাই এখন সুবিচারের কথা বলে মানুষ হাসায়। যেসব বুদ্ধিজীবীরা আজকাল টক-শো আর লেখায় শেখ হাসিনার ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত, তারা কিন্তু এতবড় অমানবিক আক্রমণ নিয়ে কথা বলেননি। এখনও সে প্রসঙ্গ উঠলে সাত-পাঁচ বলে ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো কিছু মিডিয়ার ভূমিকা। জনপ্রিয় বা বহুল প্রচারিত একটি দৈনিক শেখ হাসিনার দ্বিতীয়বার শাসনভার গ্রহণের পরপর এ নিয়ে ক্রোড়পত্র বের করে ফেলে। সেদিনই আমি জানতাম এর নাম মায়াকান্না।
বলছিলাম একুশে আগস্টের কথা। এই ঘটনাটি দেশের বাইরেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। আওয়ামী লীগের ভিতরে শুধু না, নানা পেশা ও মতাদর্শের মানুষের মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিলো, একি তবে আরেকটি পনের আগস্টের প্রতিচ্ছবি? আসলেই কিন্তু তার মতো এই ঘটনা। সেদিন যেসব নেতারা প্রাণে বেঁচেছেন, যারা এখনও আঘাত বয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রয়াত হানিফ সাহেবের মতো যেসব নেতারা শেখ হাসিনাকে আগলে ধরে পরে বাঁচতে পারেননি, তাদের সংখ্যা ও গুণগত মান হিসেবে ধরলে দেখবেনÑ বিএনপি চেয়েছিল আওয়ামী লীগ আরও একবার নেতাশূন্য একটি দল হয়ে উঠুক। কিন্তু ৭৫ আর এই সময় এক নয়। আজ মানুষ অনেক সচেতন। আজ মিডিয়ার কল্যাণে বহু অজানা ষড়যন্ত্রও নিমিষে বেরিয়ে পড়ে। আমি বলি সময়ের বরমাল্য। সেদিন যদি তিনি না বাঁচতেন বাংলাদেশের পাপ ও কলঙ্কমুক্তি হতো না। যারা ধরে নিয়েছিল এদেশে চলবে ককটেল পলিটিক্স, এদেশে মুক্তিযুদ্ধের অবিকল কিছু আর চলবে না, তাদের ধরে বিচার করত কে? তিনি এ কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তিনি না থাকলে জাতির জনক ও পনের আগস্টের সকল হত্যাকা-ের খুনিদের ফাঁসি দিত কে? কে করত দেশ ও জাতিকে দায়ভার মুক্ত?
এ কারণেই মধ্যপন্থি নব্য রাজাকার আর আপোসকামীদের দুচোখের বিষ তিনি। তার অপরাধ তিনি মানবিকতার কারণে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের নির্মূল চান, তার ধমনীতে আছে বঙ্গবন্ধুর নির্মল রক্তস্রোত। বাংলাদেশ হবার সূতিকাগার ৩২ নম্বরের অনেক অজানা তথ্য আর ইতিহাস সমৃদ্ধ শেখ হাসিনাকে তাই সুবিধাবাদীদের মনে লাগে না। তারা সব জেনেশুনেও তার বিরোধিতা করতে পছন্দ করেন। বেশ কয়েকবার বেঁচে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী যেন ন হন্যতে হন্যমান শরীর চ:। তাকে হত্যা করতে আসলেও খুনির ভুল হয়ে যায়। একটুর জন্য মিস হয় তার টার্গেট। আজও তাই আমাদের রাজনীতির ঘন অন্ধকারে শেখ হাসিনাই আলো।
তার সরকারকে আমরা সমর্থন না করতেই পারি। ভালো না লাগতে পারে বিচারহীনতা। না মানতে পারি সুন্দরবন, সীমান্ত নিয়ে থাকতে পারে মনোবেদনা। সব কি তার দায়?
যে মানবী এতগুলো আপনজন একরাতে হারিয়েও মনোবল হারাননি, যার জীবনে শোকের শেষ নেই, সে তিনি যখন এদেশের মানুষ ও মাটির কাছে থাকেন তাকে কোন কারণে হত্যা করবে পশুর দল?
একুশে আগস্ট সভ্য রাজনীতির বিরুদ্ধে মানবিকতার বিপক্ষে রক্তমাখা একটি দিন। এর অবসানের পাশাপাশি চাই জীবনমুখী রাজনীতি। সেটি আওয়ামী লীগকেও করে দেখাতে হবে।
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন
