নিহত নুরুন্নবীর স্ত্রীর আহাজারি, হ্যান্ডকাফ পরিয়ে হত্যার অধিকার কি সরকার দিয়েছে রংপুরে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
ডেস্ক রিপোর্ট : রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ বালাটারী এলাকায় গতকাল নুরুন্নবী নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এ অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, নুরুন্নবী পুলিশ হেফাজতেই মারা গেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নুরুন্নবীর স্ত্রী আরজিনা বেগম জানান, শনিবার ভোরে পুলিশ তাদের বাসায় আসে। তিনি নিজেই তখন কোতোয়ালী থানার এসআই তারেককে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জানান, একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় নুরুন্নবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছেন তারা। আরজিনা অভিযোগ করেন, দাবি করা চাঁদার টাকা না পেয়েই পুলিশ নুরুন্নবীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তার প্রশ্ন, ভোরবেলা বাড়িতে এসে ঘুম থেকে ডেকে তুলে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে মানুষ হত্যা করার ক্ষমতা পুলিশকে কি সরকার দিয়েছে?
নুরুন্নবীর ছোট ভাই গোলজার হোসেন বলেন, পুলিশ গভীর রাতে বাসায় এসে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। কোনো কথা না বলে হাতকড়া পরায়। এ সময় আমি বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবসার কথা জানিয়ে দোকানের ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাগজ দেখাই। তারপরও পুলিশ কর্মকর্তা তারেক ও তোফাজ্জল বলেন, ‘এক লাখ ২০ হাজার টাকা না দিলে মোটরসাইকেল চুরির মামলায় চালান করে দেব’। বাধ্য হয়ে ৮০ হাজার টাকা এসআই তারেককে দিই। টাকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ছেড়ে দেয়। বাকি ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য দুপুর পর্যন্ত তারা সময় দেয়। কিন্তু বড়ভাই নুরুন্নবীকে হাতকড়া পরিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
প্রত্যক্ষদর্শী মামুন জানান, এসআই তারেক তাদের সামনেই নুরুন্নবীকে কানে, ঘাড়ের পেছনে দফায় দফায় থাপ্পড় মারেন। বুকের ওপর লাথি মেরেছেন। ফলে ঘটনাস্থলেই নুরুন্নবী মারা যান। অথচ পুলিশ পুরো ঘটনা ধামাচাপা দিতে মৃত মানুষটিকে চিকিৎসার নামে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এদিকে কোতোয়ালী থানার ওসি এবিএম জাহিদুল ইসলাম জানান, পুলিশি হেফাজতে নুরুন্নবী মারা যাওয়ার অভিযোগ ওঠার কারণে লাশের সুরতহাল একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সম্পন্ন করার পর ময়নাতদন্ত করা হবে।
রংপুরের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার জাকির হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ৩ দিনের মধ্যেই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান দুপুরে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের একথা জানান।
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী