আমাকে কুকুর বল কিন্তু পাকিস্তানি না: বেলুচ শরণার্থী
লিহান লিমা: ভারতের বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেকে কুকুর বলে পরিচয় দিতে চাইলেও পাকিস্তানের নাগরিকত্ব স্বীকার করতে অস্বীকার করেন বেলুচিস্তানের কোয়েটাতে জন্মগ্রহণ করা মাজদাখ দিলশাদ বেলুচ (২৫)। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
কয়েক মাস আগে ভারত সফরকালে নতুন দিল্লি বিমানবন্দরে সন্দেহের মুখে পড়েছিলেন মাজদাখ। কারণ কানাডিয়ার পাসপোর্ট প্রাপ্ত মাজদাখের জন্মস্থান লেখা ছিল বেলুচিস্তান। তিনি বলেন, ‘আমি বারবার অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে বোঝাচ্ছিলাম আমি পাকিস্তানি নই। আমাকে কুকুর বল কিন্তু পাকিস্তানি বলবে না। আমি বেলুচ, কারণ আমার জন্ম বেলুচিস্তানে। এর কারণে আমাকে অনেক অপমাণের শিকার হতে হয়েছে।’
মাজদাখের গল্প বেলুচিস্তানের হাজারো মানুষের মধ্যে একজনের কাহিনী। যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা অত্যাচারের শিকার হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান নেয়। তিনি বলেন, আমার বাবা মীর গোলাম মোস্তফা রাইসানি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, আমার বাবাকে পাকিস্তানি আর্মি আটক করে এবং ২০০৭-০৮ পর্যন্ত বন্দি রেখেছিল। আমার মা একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমার বাবা ছাড়া পাওয়ার পর আমরা পরিবারের সবাই মিলে কানাডাতে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে চলে যাই।
সম্প্রতি মাজদাখ এবং তার স্ত্রী বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার জন্য ভারতে এসেছেন। তিনি বলেন, বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার ৭০ বছরের আন্দোলনের সাথে দিল্লির একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য তারা অনেক আনন্দিত। এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বেলুচিস্তানের জনগণের প্রতি সমবেদনা এবং তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
২০১৪ সালে কানাডাতে অভিবাসী হিসেবে আশ্রয় নেয়া মাজদাখ বলেন, পাকিস্তান বেলুচিস্তানের নিজস্ব জাতিসত্তা নিমূর্ূূল করতে চায়। তারা চায় আমরা পাকিস্তানি জাতীয়তা গ্রহণ করি অন্যথায় আমাদেরকে হত্যা করা হবে। তারা আমার দেশে গণহত্যার প্রতিশ্রুতিতে নেমেছে। আমরা জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হাজারো বেলুচ জনগণ শরণার্থী হয়ে ঘুরছে। দশ হাজারেরও বেশি নিহত হয়েছে। আমরা তিব্বতের মত বেলুচিস্তানে সরকার কায়েম করার জন্য ভারত সরকারের সহায়তা চাইছি। প্রধানমন্ত্রী মোদি যা বলবেন প্রতিটি বেলুচ সেটি সমর্থন করবেন।
বেলুচিস্তানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মাজদাখ জানান, ‘আমার ভাইবোনেরা স্কুলে যাওয়া বা শিক্ষার সুবিধা পায়নি। আমি কোয়েটা স্কুলে পড়েছিলাম কিন্তু এখন এর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। পাকিস্তান প্রতি ১০ কিলোমিটার অন্তর একটি মাদরাসা স্থাপন করেছে এবং যুব সমাজের ব্রেনওয়াশ করছে। বেলুচিস্তানে কোনো শিক্ষা নেই, চাকরি নেই। বেলুচিস্তানের জনগণ শুধুমাত্র ভৃত্যের চাকরি পেয়ে থাকে। ইসলামাবাদ বেলুচিস্তানে পাকিস্তানি মুসলিমদের সব বড় বড় পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে। আমাদের জমি অপহৃত হয়েছে। পাকিস্তান চীনা কোম্পানিকে কয়লা উত্তোলন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামাবাদ পাকিস্তানি গণমাধ্যমকে বেলুচিস্তানের মধ্যে প্রবেশ করতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। তারা এই অঞ্চলকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। যাতে কেউ খবর সংগ্রহ করতে না পারে। এটি বলা অনেক কঠিন যে, কত পরিমাণ সৈন্য বেলুচিস্তানে আছে। ভারত যদি কাশ্মীরের সৈন্য তালিকা প্রকাশ করতে পারে তাহলে পাকিস্তান কেন বেলুচিস্তানের সৈন্যের পরিমাণ প্রকাশ করতে পারবে না?’
মাজদাখ অভিযোগ করেন, পাকিস্তানি বাহিনী বেলুচিস্তানে অঙ্গ ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে। ‘আমরা দেখেছি যে অনেক মৃতদেহ গায়েব করা হয়েছে’। বেলুচদের হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের দেহ বিলুপ্ত করে ফেলা হয়েছে। আমরা এই ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে মত গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।’ সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ