ট্রাম্প চন্দ্রাহত মানুষ মনোবিদদের বিশ্লেষণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এখন তুঙ্গে। এমন সময় দেশটির এক হাজারেরও বেশি মনোচিকিৎসক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন তার ব্যক্তিত্ব-বৈকল্য রয়েছে। আর ব্যক্তিত্ব-বৈকল্যের মধ্যে রয়েছে হিংসা জনিত মনোবৈকল্য, সাড়ম্বর উপস্থিতি প্রদর্শনের প্রবণতা এবং নিজেকে ঈশ্বরতুল্য মনে করা। একজন মনোচিকিৎসক তাকে চন্দ্রাহত (উন্মাদ) বলে উল্লেখ করেছেন। ১৯৬৪ সালের নির্বাচনে, অ্যারিজোনার সেনেটর ব্যারি গোল্ড ওয়াটার শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। এরপর তিনি ফ্যাক্ট ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ম্যাগাজিনটি জনমত জরিপ ছেপেছিল। মামলায় তিনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭৫ হাজার ডলার জিতেছিলেন। চিকিৎসকরাও এ জরিপের সমালোচনা করেছিলেন অসমর্থনযোগ্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষা ব্যবহার ও কোনো পক্ষের সঙ্গে যোগসাজসের জন্য।
এরপর, ১৯৭৩ সালে আমেরিকার মনোচিকিৎসক সমিতি, চিকিৎসকদের ওই মতামতকে অনৈতিক ঘোঘণা করে। যা এখন গোল্ড ওয়াটার রুল বলে পরিচিত। ওই ষোষণায় বলা হয়েছিল, কোনো চিকিৎসক কোনো পাবলিক ফিগারকে রোগী বা আক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করতে পারবেন না, যদি না তিনি কোনো পরীক্ষা করান এবং পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য অনুমোদন দেন।
আর ২০১৬ সালের রিপাবলিকান প্রার্থীর অগ্নিমূর্তি, চিন্তা ও প্রতিক্রিয়া এবং ঘোষণা, গোল্ড ওয়াটার রুলকে এখন এমন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে যে, এখন ওটা আর প্রাসঙ্গিক কি-না।
মনোচিকিৎসক আর মনোবিজ্ঞানীরা গোল্ড ওয়াটার রুলকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছে। আর বলছে ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব-বৈকল্য রয়েছে। তারা বলছেন ট্রাম্পের রয়েছে বাগাড়ম্বরতা আর সহমর্মীতার অভাব। আরও বলেছেন চিকিৎসকরা তার রয়েছে অসুস্থ আত্মপ্রেম।
এমন হেনস্তার পর এ মাসে সমিতির পক্ষ থেকে একটা বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। বলা হয় তাদের একাজ গোল্ড ওয়াটার রুল-এর লঙ্ঘন, দায়িত্বজ্ঞানহীন, সম্মান হানিকর ও অনৈতিক।
ডক্টর পল এ্যাপেলবাম বলেন, কোনো প্রার্থীর গায়ে মানসিক রোগের তকমা লাগানো অনৈতিক। এটা অন্য কারো জন্য সুবিধা দিতে পারে। ডক্টর পল মেডিসিন ও আইনের অধ্যাপক। এধরনের কাজকে তিনি অনুমোদন করেন না। বলেন, এবছর ডাক্তাররা যা করছে, সম্ভবত তারা জাতিকে রক্ষা করছে।
মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম ডোহের্তি গত জুনে একটি অনলাইন ঘোষণা প্রকাশ করেন। এতে স্বাক্ষর করেছিলেন দু’হাজার দু’শ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। ওই ঘোষণায় ট্রাম্পবাদের বিরোধিতা করা হয়েছিল। ডক্টর ডোহের্তি বলেন, ওটা ছিল আমার স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। আর আমরা এটা করেছি যখন দেখছি যে গণতন্ত্র বিপন্ন।
এদিকে গোল্ড ওয়াটার রুল-এর সমর্থকরা তিনটি যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। দূর থেকে এমন মন্তব্য ভুল হতে পারে, এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, আর এমন কাজ এ বিষয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে, বিশেষ করে গোপনীয়তার অঙ্গীকার ব্যাহত করবে। তারা কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, এ কর্মে বামপন্থার আভাস দেখা যায়।
পাবলিক ফিগারের মনোগঠন নিয়ে বিরূপ সমালোচনা আমেরিকার দুই দলের ইতিহাসেই আছে। বাগাড়ম্বরতা ও আত্মমগ্নতার অভিযোগ আছে লিনডন বি. জনসনের বিরুদ্ধে। রিচার্ড নিক্সনের শেষ সময়টা উন্মাদনার অভিযোগে অভিযুক্ত। ক্লিন্টনের কালে অভিযোগ ছিল শঠতার, তার বেলায়ও ব্যক্তিত্ব-বৈকল্যের অভিযোগ ছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে মনোবিদদের আনা অভিযোগ খ-নের চেষ্টা করেছেন। হিলারিকে তিনি অস্থিতিশীল ও বিপর্যস্ত বলে কটুকথা বলেছেন।
বেশিরভাগ মনোবিদ যখন ট্রাম্পের বিরূপ সমালোচনায় উচ্চকণ্ঠ, তখন অনেকে বলছেন প্রকাশ্যে মনোবিশ্লেষণ করতে হলে উভয় প্রার্থীর মনোবিশ্লেষণ করা উচিত। এ প্রসঙ্গে তারা গোল্ড ওয়াটারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বলেন, ১৯৯৮ সালে গোল্ড ওটার যখন মারা যান তখন তিনি তার দলের সম্মানিত রাজনীতিক হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। আর একথা প্রমাণ করে যে, এক চোখা বিশ্লেষণ প্রায়শই ভুল হয়।
ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন মোহসীন আব্বাস।