দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে কৌশলগত বিরোধে চীন-যুক্তরাষ্ট্র
নূসরাত জাহান : দক্ষিণ চীন সাগর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি অংশ। এ সাগরের চারপাশে রয়েছে চীন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম। এই সাগর দিয়েই বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে। তাই এ সাগর ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস
খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা নিয়ে চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক দেশগুলোর বিরোধ দিনকে দিন ভয়ানক মোড় নিচ্ছে। এমন কিছু জলসীমা, দ্বীপ, চর ও প্রবাল দ্বীপ চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দখল করে নিয়েছে। যেগুলো অন্যান্য দেশও তাদের বলে দাবি করে। এ নিয়ে বিরোধ লেগেই থাকতো।
চীনের দখলে থাকলেও দক্ষিণ চীন সাগরের প্যারাসেল এবং স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা দাবি করে আসছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। এ নিয়ে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) মামলা ঠুকে দেয় ফিলিপাইন। গত মাসে সেই মামলার রায় হয়েছে। রায়ে চীনের দাবি খারিজ করে দিয়েছে। যদিও চীন প্রথম থেকেই এ ট্রাইব্যুনালের বিচার মেনে নেয়নি।
তবে দক্ষিণ চীন সাগর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কৌশলগত বিরোধ আসলে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই চলছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ওই এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আইসিটির রায়ের পর আশা করা হচ্ছিল, সাগরের বিরোধপূর্ণ অংশ নিয়ে চীনসহ পাঁচটি দেশের মধ্যে চলমান বিরোধের শান্তিপূর্ণ অবসান হবে। কার্যত রায় ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে দূরত্ব ও বিরোধ আরও প্রকাশ্য হলো। যা দুই বিশ্বশক্তির মধ্যে ব্যবধান আরও গভীর করবে। নিশ্চিতভাবে বিরোধ আরও বাড়বে। এমনকি যুদ্ধ বাঁধারও শঙ্কা রয়েছে। কারণ চীন কখনই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গার উপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ ছাড়বে না।
মার্কিন কর্মকর্তাদের আশা, এ রায় কূটনীতিতে গতি সঞ্চার করবে। চীন রায় প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটা ‘ভিত্তিহীন’।
আইসিটির রায় মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে রায় কার্যকর করার কোনো ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের নেই।
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য বাণিজ্য করা হয়। এই এলাকা চীনের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তারা নিজের দেশের নাগরিকদের ওই এলাকায় মাছ ধরতে দেয় না। আর কেউ হাতেনাতে ধরা পড়লে তার এক বছরের কারাদ-। আর সেই জায়গা এত সহজে হাতছাড়া হতে দেবে না চীন। চীন ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ওই এলাকা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে ‘পিপলস ওয়ার অ্যাট সি’ এর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
সাম্প্রতিক সময়ের স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে, চীন স্প্রাটলি দ্বীপে বিমানবাহী জাহাজ মোতায়েন করেছে। যাতে বিমান হামলা হলে তারা প্রতিহত করতে পারে। এমনকি আকাশ প্রতিরক্ষা জোন করার ঘোষণাও দিয়েছে চীন। এছাড়া ওই এলাকায় বিমানবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। এই বিরোধে শুধু চীনই ঘি ঢালছে না। এই দ্বীপকে তাক করে পাঁচটি মোবাইল রকেট লাঞ্চার বসিয়েছে ভিয়েতনাম। এছাড়া ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই ও মালয়েশিয়াও কম যায় না।
তবে চীনের এসব ব্যবস্থার জবাবে ওবামা প্রশাসন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিরোধপূর্ণ এলাকা এবং দ্বীপগুলোর খুব কাছেই এরই মধ্যে তারা যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছে। যা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে পারে বলে ধারণা করছে ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম