সিরিয়ার বাবা-মা তাদের সন্তানদের কী গল্প শোনায়?
লিহান লিমা : আমি আমার সন্তানদের বুঝাতে ব্যর্থ হই যে, তাদের ঘিরে কী চলছে? বিশেষ করে যাদের জন্ম যুদ্ধের পরে। আমি তাদের যুদ্ধ সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করি এবং ভুল ও সঠিক পথের ব্যাখ্যা দেই। তাদের বিপ্লব ও স্বাধীনতার জন্য আমাদের দাবির কথা বলি। সিএনএন
আমি তাদের সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিলের কথা বলি। কিভাবে তার ট্যাংক এবং সেনাবাহিনীর ভয়ে সিরিয়ার অর্ধেকেরও বেশি লোক পালিয়ে গেছে। কথাগুলো বলছিলেন একজন বাবা। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ শুরুর ৫ বছর পর এখন আর শিশুরা বিমানের শব্দে সচকিত হয় না। তাদের মধ্যে কেউ ভয়ে চিৎকার করে, কাঁদে আবার কেউ হাসে। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, বোমা কি? এটি কেন মারা হয়? সব-সময় কেন বোমার আঘাত চলতেই থাকে? এ বিমানগুলো কোন জায়গা থেকে আসে? কে চালায়? আমার ৫ বছরের ছোট্ট মেয়ে যুদ্ধের সময় জন্মগ্রহণ করেছে। স্বাভাবিক জীবন সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। সে ধ্বংস, ধ্বংসাবশেষ, দেয়াল বা ছাদ ছাড়া ঘর-বাড়ি, পোড়ানো গাছ দেখে অভ্যস্ত। সে কখনো পার্কে বা থিয়েটারে যাওয়ার বায়না ধরে না। কারণ তার জন্মের আগেই আলেপ্পোতে এগুলোর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
সে জানে বোমা পড়লে মানুষ মারা যায়। তবে সে কখনোই স্বাভাবিক মৃত্যু কি সেটি বুঝতে পারে না। আমাদের এক প্রতিবেশীর মৃত্যু হলে সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, তিনি কি গোলা-বারুদের আঘাতে মারা গিয়েছেন? আমি বললাম, না, তাহলে কি বোমার কারণে? আমি আবার বললাম, না। বোমার টুকরোর আঘাতে? না। আমার উত্তর শুনে সে দ্বিধান্বিত হয়ে বসেছিল। এরপর বলল, তাহলে তিনি কিভাবে মারা গিয়েছেন? এটি তার কাছে বলা খুব কঠিন যে মানুষ কিভাবে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করে।
আমার বড় ছেলে ইব্রাহিমের বয়স ১০ বছর। তার পা এবং তলপেট আহত হয়েছিল। এখন সে যেকোনো অপরিচিত শব্দ বা বিকট শব্দ শুনলে ভীত হয় ওঠে। সেটি হোক কোনো বিমান, মোটরসাইকেল বা গাড়ি। সবকিছুর শব্দ তার কাছে বোমা মনে হয়। একবার তাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় সে লাফ দিয়ে পড়ে যায়। কারণ সে এর শব্দকে বোমা মনে করেছিল।
আমি আমার পরিবারের সঙ্গে একটি ঘণ্টাও বিচ্ছিন্ন থাকি না কারণ আমি তাদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকি। আলেপ্পো মানেই বিপদ। একদিন আমার ছেলে দোকানে যাওয়ার পর তার পা ও জীবন প্রায় হারাতে বসেছিল, দোকানটি বোমারুবিমানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি যখন বিমান হামলার কথা শুনি বাড়িতে এসে দেখি ইব্রাহিম বাসায় ফেরেনি। আমি ১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে তাকে খুঁজি।
এরপর তাকে স্থানীয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খুঁজে পাই। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যে আমি তাকে জীবিত খুঁজে পাব। রক্ত এবং ধুলোয় তার শরীর মাখামাখি ছিল। সে যখন সংকটমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক হলো আমাকে জিজ্ঞেস করল না কে তাকে বোমা মেরেছে? কারণ সে জানে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের শাসন চলছে।
সে ক্রমাগত কাঁদছিল এবং অস্পষ্ট কথা বলছিল। আমরা তাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করি যে সে অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছে। সে বারবার বলছিল তার পা কেটে ফেলা হয়েছে। তাকে বিশ্বাস করাতে অক্ষম হয়ে আমরা তার পায়ের ছবি তুলে তাকে দেখাই। এরপর সে নিশ্চিত হয় যে, তার পা ঠিক আছে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ