
কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে দায়িত্ব শেষ করা যাবে না
রবিউল আলম
কোরবানিকে সুন্দর পরিবেশ সম্মত করতে সরকার ও সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অধীনস্থ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নানাবিধ কর্মপরিকল্পনা করে চলেছেন। কোরবানির স্থান নির্ধারণ পরিচ্ছন্ন, পরিবেশ সম্মত করতে এমন কোনো কৌশল নেই যা পরিকল্পনাবিদরা করছেন না। কিন্তু যারা পরিকল্পনা করেন তারা নিজেরা তাদের নির্দেশ মানেন না, কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানে তারা নিজেদের পশু কোরবানি করেন না। বিগত তিনবছর যাবত সরকার দেশের পরিবেশ রক্ষায় কোরবানিকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মপরিকল্পনা করে যাচ্ছেন, কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ বলব না, তবে এটা সত্য লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না।
পরিকল্পনাবিদেরা সমিতি, ইমাম, মাংস শ্রমিক, মাংস ব্যবসায়ী, চামড়া ব্যবসায়ী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সঙ্গে কোনো মতবিনিময় করেনি। জানি না কি কারণে করেনি, কোরবানির পশু জবাই, পশুর মাংস ছাড়ানো ও কোরবানির পশুর বর্জ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব যারা পালন করেন এবং করছেন তাদের প্রশিক্ষণ দরকার। কারণ কোরবানির পশুর বর্জ্য এখন রপ্তানিযোগ্য, শতশত কোটি টাকা কোরবানির পশুর বর্জ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে দেশ। আমি বারবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি মাংস শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অধীনস্থ ইকোনমিক গ্রোথ প্রকল্প মাংস শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করছে, ট্যানারির মালিকদের মাধ্যমে প্রকৃত মাংস শ্রমিক এতে অংশগ্রহণ করতে পারছে না এবং সঠিক প্রশিক্ষণ হচ্ছে না। তবু লোক দেখানো দায়সারা প্রশিক্ষণ হচ্ছে, সরকারের ও বিদেশের অর্থ অপচয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শাখা হয়েছে, দেখার কেউ নেই। একজন ইমাম, পশু সঠিক স্থানে জবাই করতে না পারলে রপ্তানিতে তৃতীয় স্থান পাওয়া পণ্য চামড়া নষ্ট হবে।
একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী পশুর বর্জ্য যথাস্থানে না পেলে তার কাজে অসুবিধা হয়। তাই বলতে চাই, সচিবালয় ও অফিসে বসে পরিকল্পনা করে কোরবানি স্থান নির্ধারণ করলে সমস্যা সমাধান হবে না। যারা কোরবানির সঙ্গে যুক্ত তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে, কোরবানির মাঠ, স্থান ও পশু সবই এর উপযুক্ত হতে হবে এবং যারা পরিকল্পনা করছেন তারা নিজেদের কোরবানির পশু যথাস্থানে জবাই করবেনÑ প্রত্যাশা এমনটি। হাজার হাজার কোরবানির স্থান নির্ধারণ করে টিভিতে ঘোষণা দিলে কোরবানি দাতা লক্ষ টাকার পশু নিয়ে খোলা মাঠে কোরবানি দিতে যাবে না। কোরবানি দাতার জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে।
পশু জবাইয়ের স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে, পশু জবাইকারী ও মাংস ছাড়ানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং কোরবানির পশুর চামড়া থাকতে হবে। এলাকার কিছু উঠতি মাস্তান ও গরিব-মিস্কিনদের ভীড় থেকে কোরবানিদাতা তার মাংস নিজের বাসায় আনতে সমস্যা ও অনিরাপত্তাবোধ করেন, তার উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধান কে করবে? উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে কোরবানির কর্ম পরিকল্পনা করতে হবে। আর যদি কোরবানির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করে অফিসে বসে যত পরিকল্পনা করুন তাতে সঠিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না বলেই মনে করি।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন
