মোহাম্মদ এ আরাফাত
গ্রিন এনার্জির পক্ষে আমিও। কিন্তু এটা বাস্তবসম্মত নয়। গ্যাসের ওপর আমরা অনেক নির্ভরশীল। গ্যাসের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আমরা আরও গ্যাস উত্তোলনের চেষ্টা করছি। কিন্তু কবে পাব এই গ্যাস, পাব কি পাব না, তা অনিশ্চিত। গ্যাস পাব সে আশায় আমরা বসে থাকতে পারি না। অর্থনীতির চাকা তো সচল রাখতে হবে। এসব কথা চিন্তা করেই আমাদের কয়লার দিকে যেতে হয়েছে, নিউক্লিয়ারে যেতে হয়েছে।
রামপাল বিদুৎকেন্দ্র বিরোধী গ্রুপের কিন্তু কাজ করতে হয় না। তাদের কাজটিই হচ্ছে শুধু কথা বলা। সরকারের তো এটা কাজ নয়। আর এসব মানুষের প্রায় শতভাগ কাজ হচ্ছেÑ টকশোতে যাওয়া, কলাম লেখা, মিটিং করা। তাদের তো কোনো চুক্তি নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। চুক্তিটি সুষম হচ্ছে কিনা, পরিবেশ যাতে ঠিক থাকে তাও দেখতে হচ্ছে, দেশের স্বার্থের দিকটিও দেখতে হচ্ছে। সরকারের বড় একটা সময় এসব কাজেই ব্যয় হয়। তার ফলেই সরকার তাদের সঙ্গে পেরে উঠেনি প্রচারণায় কাউন্টার করতে। তারা আসলে এতদিন ফাঁকা মাঠে গোলের পর গোল দিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। রামপালের বিদুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন বা আশেপাশে কী কী ক্ষতি হতে পারে সেই অর্ধেক গল্পটাই বলা হচ্ছে। কিন্তু রামপাল যেন কোনোভাবেই সুন্দরবন বা আশেপাশের কোনো ক্ষতি যাতে না হয়, তার জন্য কী কী করছে সরকার, তা আর বলছে না কেউ। যারা আন্তর্জাতিক মানের সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তারা মানুষকে সত্য কথাগুলো বলার চেষ্টা করছেন। যাতে মানুষ অজ্ঞতাবশত কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়। প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে বলা আছে, ব্যাখ্যা করা হচ্ছেÑ যা যা অভিযোগ তাদের।
কিভাবে, কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়লার দূষণ প্রশমন একেবারে নি¤œস্তরে নিয়ে এসে তারপর এই কাজটি করা হচ্ছে। পরিবেশগত দিক থেকে যদি দেখিÑ এখানে বরং রামপাল বিদুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের লাভ হবে। সুন্দরবন নিয়ে কি কেউ কিছু জানে, যারা এত সুন্দরবন সুন্দরবন করে? সুন্দরবনের আশেপাশে যে জনবসতি, তাদের পদচারণায় যেভাবে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সুন্দরবনের গাছ কাটে, বাঘ মারে, ডাকাতি করে। যদি সমস্ত ক্ষতিকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যে প্রযুক্তিগুলো বেস্ট প্র্যাক্টিস করে উন্নত বিশ্বে, যেসবের উদাহরণ রয়েছে, সেসব ব্যবহার করে ক্ষতি প্রশমন করে যদি এমন প্রজেক্ট হয়, তাহলে এই প্রজেক্টকে ঘিরে আশেপাশের এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। জীবিকার তাগিদে যেসব মানুষ সুন্দরবনের গাছ কাটে, ডাকাতি করে এই লোকগুলোর একটা বিকল্প ব্যবস্থা হবে।
পরিচিতি : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মতামতটি লিখেছেন আশিক রহমান
সম্পাদনা : জব্বাার হোসেন