
শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা
আশরাফুল আলম খোকন
শুধু একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাই নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কখনও নিজ বাসভবনে, কখনও জনসভায় আবার কখনও তার গাড়ির বহরে।
জানা যায়, শেখ হাসিনা প্রথম হামলার শিকার হন ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি, চট্টগ্রামে। লালদীঘি ময়দানের আট দলীয় জোটের মিছিলে শেখ হাসিনাকে হত্যায় পুলিশ ও বিডিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে সাতজন নিহত ও গুরুতর আহত হয়েছিল ৫৪ জন। ১৯৮৯ এর ১১ আগস্ট রাতে ফ্রিডম পার্টির একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড হামলা চালায়। ১৯৯১ এর ১১ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়া হতে ঢাকায় ফিরে গ্রিনরোডের কাছে ধানমন্ডি স্কুলে উপনির্বাচনের ভোট প্রদানের পর গ্রিনরোডে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ভোটের পরিস্থিতি দেখতে যান। গাড়ি হতে নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির কর্মীরা গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায়। ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশের মুখে তাকে বহনকারী রেলগাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়েছে। ১৯৯৫ এর ৭ ডিসেম্বর শেখ রাসেল স্কয়ারের নিকট সমাবেশে ভাষণ দানরত অবস্থায় শেখ হাসিনার উপর গুলিবর্ষণ করা হয়।
১৯৯৬ এর ৭ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তৃতার পর হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস হইতে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে ২০ জন আহত হয়। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্রকন্যাসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে ই-মেইল করে ইন্টার এশিয়া টিভির মালিক শোয়েব চৌধুরী। ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলের কাছে ও হ্যালিপ্যাডের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখেছিল। ঘটনাস্থলের কাছে শেখ লুৎফুর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠের এক সভায় প্রধানন্ত্রীর বক্তব্য রাখার কথা ছিল। ২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জঙ্গিরা সেখানে বোমা পুঁতে রাখে যা গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করে।
২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেদিন রাত ৮টার দিকে জনসভাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়। ২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়। ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে তার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়।
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে গুলিবর্ষণ করে জামায়াত-বিএনপি। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সেনাবাহিনী সমর্থিত ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেফতার করেছিল। তাকে রাখা হয়েছিল জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব-জেলে। সে সময় শেখ হাসিনার খাবারে ক্রমাগত বিষ দিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়।
২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে এবং সে জন্য আগাম পেমেন্টও প্রদান করা হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে একটি সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনা করা হয়েছিল যা পরে ব্যর্থ হয়ে যায়। ২০১৪ সালের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার জঙ্গি শাহানুর আলম ওরফে ডাক্তার। সর্বশেষ ২০১৫ এর ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে কারওয়ানবাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জেএমবি।
লেখক : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব
