যতীন সরকার
স্কুল-কলেজের পরীক্ষার পাশের হার বৃদ্ধির খবরগুলোতে এখন আর আগের মতো আনন্দের বিষয় না। কারণ, আমি নিজে শিক্ষকতা করেছি ৪২ বছর, এখনও পর্যন্ত অনেক জিপিএ ৫.০০ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী আমার কাছে আসে। তাদের অনেকের মধ্যেই লক্ষ্য করেছি, দেখেছিÑ তাদের মধ্যে সাধারণ ভাষাজ্ঞান নেই। এমনকি, অক্ষরজ্ঞান, বাংলার পুরো অক্ষর সম্পর্কেও ভালো ধারণা বা জানাশোনা নেই। সঙ্গে সঙ্গে যুক্তাক্ষর সম্পর্কেও তাদের যথাযথ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এরকমও জিপিএ-৫.০০ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীও রয়েছে। এরপরও পত্র-পত্রিকায় এত পাশের হার, জিপিএ-৫.০০ প্রাপ্তদের সংখ্যা বেশি দেখিয়ে কী লাভ তা বোঝা মুশকিল।
জিপিএ ৫.০০ প্রাপ্ত এসব শিক্ষার্থী যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে যায়, তখন দেখা যায়, তাদের অধিকাংশই ভর্তির সুযোগ পায় না। তখনই আসলে বোঝা যায়, এই পাশের হারের কোনো দাম নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা যেন যথার্থ হয়, সে ব্যাপারে আমাদের অধিক যতœশীল হওয়া উচিত। একজন শিক্ষক শিখাতে পারেন, কিন্তু সেই শেখাটা যেন আনন্দের হয়। আনন্দিতভাবে হয় এবং অবশ্যই শিক্ষার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে নিতে হবে। আজকাল দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থীকে দিনে একাধিকবার কোচিং সেন্টারে যেতে হয় শিক্ষা লাভের জন্য। আমাদের এখানে অনেকেই বলে থাকেন, কোচিং সেন্টার বন্ধ করার জন্য। বলা হচ্ছে, কিন্তু আমরা তার দৃশ্যমান কর্মকা- দেখছি না। শিক্ষার অবস্থা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার ফলে তাদের কোচিং সেন্টারে পড়তে যেতে হয়। এমন অবস্থা পরিবর্তন করা জরুরি এবং বইয়ের বোঝা থেকে ছেলে-মেয়েদের রেহাই দিতে হবে। শৈশব থেকে আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাইমারি স্কুলের ছেলে-মেয়েদের তিনটি বিষয় ভালো করে শেখা উচিত। রিডিং, রাইটিং এবং লিসেনিং। আর যদি ভালো করে দুনিয়াটাকে দেখতে পারে এবং পাঠ্যবইয়ের বাইরের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে দেওয়া যায়, পড়ালেখা তখন তাদের কাছে আনন্দময় হবে।
শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেই পত্র-পত্রিকায় আনন্দ-উৎসবের অনেক সংবাদ পাই। এবছরও জিপিএ ও গড় পাসের হার বৃদ্ধি পেলেও এমন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে যেখানে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। পাস করতে ব্যর্থ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার খবরও অনেকসময় মিডিয়ায় দেখি। এমন অবস্থার জরুরি পরিবর্তন চাই। শিক্ষার মান বৃদ্ধি চাই। পরিস্থিতি পরিবর্তন হলেই শিক্ষার্থীদের এমন পাসের হার বৃদ্ধিতে আমরা আনন্দিত হব।
পরিচিতি : শিক্ষাবিদ
মতামত গ্রহণ : শরিফুল ইসলাম / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন