সুপ্রিম কোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় মামলা জট বাড়ছে
এস এম নূর মোহাম্মদ : বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ১৫২ জন ফাঁসির আসামি। হাইকোর্টে এদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হচ্ছে। এ কারণে সময়ও লাগছে বেশি। এছাড়া রয়েছে জঙ্গি মামলাগুলোর শুনানি। সব মিলিয়ে উচ্চ আদালতের অন্যান্য মামলা নিষ্পত্তি বাড়লেও ডেথ রেফারেন্স শাখায় মামলা জট বাড়ছে।
গত ৩১ মে পর্যন্ত ডেথ রেফারেন্স শাখায় ৪৮৮টি মামলা বিচারাধীন। একইসময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৯টি মামলা। আর এই সময়ে দায়ের হয়েছে ৬৬টি মামলা। বর্তমানে পেপারবুক তৈরি হয়ে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে ১৭টি। এছাড়া শুনানি চলছে ১০টি মামলার। এর আগে ২০০৪ সালে দায়ের হয় ১৭৪টি আর নিষ্পত্তি হয় ১০১টি মামলা। ২০১২ সালে নিষ্পত্তি বেড়ে হয় ১৪৫টি এবং বিচারাধীন ছিল ৪৫০টি মামলা। ১৩ সালে নিষ্পত্তি হয় ১১১টি আর ওই সময় পর্যন্ত বিচারাধীন ছিল ৪০৬টি মামলা। ১৪ সালে আবারও নিষ্পত্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৫-এ, আর সেসময় পর্যন্ত বিচারাধীন ছিল ৩৬৩টি মামলা। কিন্তু গত বছর নিষ্পত্তির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫৮-তে। আর একইসময়ে বিচারাধীন থাকে ৪১৯টি মামলা।
এদিকে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫ হাজার ৫২৫টি এবং হাইকোর্ট বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে ২২ হাজার ৮৫৮টি মামলা। আর গত বছর আপিল বিভাগে ৯ হাজার ৯৯২টি আর হাইকোর্ট বিভাগে নিষ্পত্তি হয় ৩৭ হাজার ৭৫৩টি মামলা। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩১ ধারা অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকরা যেকোনো প্রকার দ- দিতে পারেন। তবে শুধু মৃত্যুদ- দিলে সেটি হাইকোর্টে অনুমোদন করাতে হয়। আর সে অনুযায়ী মামলার নথিপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয় উচ্চ আদালতে। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে চাঞ্চল্যকর হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপার বুক তৈরি করে তা উপস্থাপন করা হয় শুনানির জন্য।
হাইকোর্টের রায়ে সংক্ষুব্ধরা অনেকে আবেদন করেন আপিল বিভাগে। এরপর রিভিউ পর্যন্ত সুযোগ থাকে। আর রিভিউ খারিজ হলে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে কার্যকর করা হয় মৃত্যুদ-। কিন্তু নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পর থেকেই ফাঁসির আসামিকে রাখা হয় কারাগারের কনডেম সেলে। সেখানে তাদের থাকতে হয় মৃত্যুদ- কার্যকরের আগ পর্যন্ত বা সাজা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত।
সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ৪৮৮ মামলায় প্রায় হাজারের মতো মৃত্যুদ- প্রাপ্ত আসামি রয়েছে কনডেম সেলে। যেখানে থেকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুনছে আসামিরা। আর এসব ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের করা আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় বাড়ছে বন্দিত্বের সময়। যাতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মাত্র দুটি বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স শুনানি হচ্ছে। এর মধ্যে আবার শুধু বৃহস্পতিবারে শুনানি হয় একটি বেঞ্চে। যার কারণে নিষ্পত্তির সংখ্যা কমে গেছে। এজন্য বেঞ্চ সংখ্যা আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ডেথ রেফারেন্স মামলা নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি করে মামলা নিষ্পত্তি করতে। বর্তমানে বিডিআর মামলার শুনানি হচ্ছে। চলছে একের পর এক জঙ্গি মামলার শুনানিও। এতে অনেক সময় লাগছে। এছাড়া বিজিপ্রেস থেকে পেপার বুক তৈরি হতেও কিছুটা সময় লাগছে। আর আমাদের বিচারক এবং জনবলের সংখ্যাও কম। আশা করছি অবকাশের পর বেঞ্চ বাড়বে। যাতে করে নিষ্পত্তিও বাড়তে পারে।
এছাড়া জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, এতে আমরা নিজেরাও কিছুটা দায়ী। কারণ ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হলে একটা কোর্টেই আটকা থাকতে হয়। এজন্য আইনজীবীরাও সময় নেন। এতে মামলা ডিলে হয়।
তিনি বলেন, এখন তো কিছুটা বিচারক সংকটও রয়েছে। আমি মনে করি, নতুন বিচারপতি নিয়োগ হলে অভিজ্ঞদের দিয়ে অন্তত দুটি বেঞ্চ করা যেতে পারে যারা নিয়মিত শুধু ডেথ রেফারেন্স শুনবে। তাহলে মামলা নিষ্পত্তি বাড়তে পারে। সম্পাদনা: আ. হাকিম