আফসানাদের এমন মৃত্যু আর কত?
ওয়াসিম ফারুক
তনু হত্যার পর মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। তার রেশ না কাটতেই পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হন। দুটি হত্যার পর অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী এ দুটি হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানাতে পারেনি দেশবাসীকে। মানুষ যেখানে এসব হত্যাকা-ের কারণ ও হত্যাকারীদের বিচারের বিষয়ে জানতে চাইছে, এমন অবস্থার মধ্যেই রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়ার বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আফসানা ফেরদৌসের মৃত্যু হয়।
সুদূর ঠাকুরগাঁও থেকে রাজধানী ঢাকায় এসেছিলেন আফসানা লেখাপড়ার জন্য। লেখাপাড়ার পাশাপশি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গেও নাকি জড়িত ছিলেন আফসানা। ফেরদৌস আফসানার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার চেষ্টা করছে, বোঝার চেষ্টা করছে মানুষ। এই হত্যা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠে আসছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এমন ধারণাও তৈরি হয়েছে জনমণে, ধর্ষণের পর আফসানাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে? সন্দেহের তীর ছাত্রলীগ তেজগাঁও কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিনের দিকে। নিহত শিক্ষার্থী আফসানার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হত্যাকা-ের পর থেকেই টেলিফোনে আফসানার পরিবারকে রবিনের পক্ষ থেকে তার বন্ধু-স্বজনেরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। তদন্তে অবহেলার অভিযোগও রয়েছে পরিবার ও তার দল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আফসানার মৃত্যুর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশের আগেই তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ চিহ্নিত না করে কোনো লাশ দাফন করা কতটুকু বৈধ সেটাই জনমনে বড় প্রশ্ন?
একটি ক্ষেত্রে আফসানা ও রবিনের পরিবার বক্তব্য প্রায় একইরকম উভয় পরিবারই বলে আসছে, দীর্ঘদিন যাবৎ আফসানা ও রবিনের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। আর আফসানা মানিকদীর যে বাসায় ভাড়া থাকতেন ওখানকার সবাই জানতেন আফসানা বিবাহিত আর ছাত্রলীগ নেতা রবিনও নাকি স্বামী হিসেবেই সপ্তাহান্তে ওই বাসায় যাতায়াত করতেন। আফসানা খুন হয়েছে না আত্মহত্যা করেছে সেটা প্রশ্ন নয়, বড় প্রশ্ন হলোÑ আফসানার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন মেধাবী ছাত্রীর অকালে জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। আফসানা যদি আত্মহত্যা করেই থাকে তাহলে কার প্ররোচণায় তার এই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো? আত্মহত্যা বা হত্যা কিংবা যদি কারও প্ররোচনা আফসানার মৃত্যু হয়ে থাকে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি দাড় করানোই হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর দায়িত্ব। তনু, মিতু কিংবা আফসানাÑ প্রতিটি হত্যার সঠিক তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারই মানুষের প্রত্যাশা।
লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন