আমাদের অর্থনীতির মুখোমুখি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ড. অনুপম সেন গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক বলেই শেখ হাসিনা বারবার খুনিদের টার্গেট হচ্ছেন
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
১৫ আগস্টের ঘটনাকে আমরা ধরে নিয়েছিলাম কিছু অপশক্তি, অশুভশক্তির কাজ। তারাই এই নির্মম হত্যাকা-টি ঘটিয়েছে। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাকে মনো হলো, রাষ্ট্রশক্তিই এই হত্যাচেষ্টা করেছে। বিরোধী দলকে ধ্বংস করার জন্যই রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহার করলÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ড. অনুপম সেন।
তিনি বলেন, একুশে আগস্টের ঘটনাকে যেভাবে রাষ্ট্রশক্তি বিপথে পরিচালনার চেষ্টা করেছিল, জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল, তার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা বড় পরিবর্তন আসল। দেখা গেল, আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গোপনে ব্যবহার ও প্রয়োগ করে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয় ছিল।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা হয়েছিল। তিনি বারবার খুনিদের টার্গেট হয়েছেন। কেন এমনটা হচ্ছে? কারণ শেখ হাসিনা হচ্ছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক বলেই শেখ হাসিনা বারবার খুনিদের টার্গেট হচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু তো বাংলাদেশেরই প্রতীক। বাবার পর কন্যা শেখ হাসিনাও প্রতীক হয়ে উঠেছেন নানাভাবে। জনগণ তাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষ শক্তি হিসেবে নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই আমাদের নিয়ে বিভিন্ন বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখছি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের কাছ থেকে, সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে। সাম্রাজ্যবাদীদেরও বিভিন্ন রকম রূপ থাকে। তারা সেই প্রতিক্রিয়া লালন পালন করে থাকে। হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলার মধ্যে দিয়েই সাম্রাজ্যবাদীদের ভিন্নরূপেরই প্রতিফলন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার পেছনে জওহরলাল নেহেরুর অবদান অনেক। নেহেরু ভারতের গণতন্ত্রকে নানাভাবে রক্ষা করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লালন করেছেন। শেখ হাসিনাও তাই করছেন। আমাদের বিচারব্যবস্থা এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। শেখ হাসিনা ২১ আগস্টের বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা মামলাটিকে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই নিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলাকেও স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনকেও এখন স্বাধীন ও শক্তিশালী বলে মনে হচ্ছে। সংসদের স্থায়ী কমিটি, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনাই। এভাবেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি ভিত্তি তৈরি করেছেন। তাকে আরও অন্তত দুই টার্ম বা দশ বছরের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে পারলে গণতন্ত্র একটি দৃঢ়ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. অনুপম সেন বলেন, ১৯৭১ সালের রক্তাক্ত স্বাধীনতা যুদ্ধ, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেলাম। একটা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো। গণতন্ত্র পেলাম আমরা। প্রকৃত অর্থে পাকিস্তানে কখনো গণতন্ত্র ছিল না। সবসময়ই সংবিধানে ক্রটি ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু একটা বড় প্ল্যাটফরম, সেখানে জামায়াত, প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধগোষ্ঠী অনেক সময় সতর্কতা সত্ত্বেও তার মধ্যে ঢুকে পড়ে। বাংলাদেশে যা হয়, যারাই সরকারে আসে, সেই দলে ঢোকার চেষ্টা করে অপশক্তিগুলো। অনেক সময় তারা ঢুকেও যায়। আমাদের কিছু রাজনৈতিক নেতাও ক্ষুদ্র স্বার্থে এসব প্রশ্রয় দেন। প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে এরা ধীরে ধীরে দলে কোনো না কোনোভাবে ঢুকে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়, দলকে বিব্রত করার চেষ্টা করে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ও এরকম কিছুটা হয়েছিল। খন্দকার মোশতাক আহমেদ তার বড় উদাহরণ। এদের সম্পর্কে আওয়ামী লীগকে সবসময় সজাগ, সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের যারা পক্ষশক্তি তাদের সবসময়ই আওয়ামী লীগকে কীটমুক্ত, পরিষ্কার রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, পরিশুদ্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেনÑ তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সবাইকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন