![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
আহত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী জবি শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ কাঁদানে গ্যাস
মীর রওশন আলম, জবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) হলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগে জবি প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আবাসনসংকট নিরসনের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে জবি শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় বংশালে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল ছুড়লে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করে। মিছিলটি লক্ষ্মীবাজার মোড়ে এলে পুলিশের লোহার ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রায় সাহেব বাজারের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানেও পৃথক আরেকটি লোহার ব্যারিকেডের মুখে পড়েন তারা। ব্যারিকেড ভেঙে তাঁতিবাজার মোড় হয়ে বংশালের দিকে অগ্রসর হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে সাজোয়াঁ যানসহ বড় একটি পুলিশি ব্যারিকেটের সামনে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড অতিক্রম করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ারশেল ও জল কামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। একই সঙ্গে লাঠিচার্জও করে। এসময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বংশাল এলাকা।
টিয়ার শেলে আক্রান্ত হন তিন সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী টিয়ার শেলের ক্ষতিকর ধোঁয়ায় মাথা ঘুরে রাস্তায় পড়ে যান। এসময় আশপাশের দোকানদার, হকার এবং অন্যন্য শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধার করেন। তাদের আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে নিশ্বাস নিতে দিলে কিছুটা ধাতস্থ হন তারা। এছাড়া লাঠিচার্জে আফজাল, ইকরা, মহসিনা, মিথুন, অনিমেষ, মাহিম, সাব্বির, সফিকুল, প্রসেনজিৎ এবং রাজীবসহ প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা ন্যাশনাল ইসস্টিটিউট হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের মুহুর্মুহ টিয়ার শেল ও জলকামান নিক্ষেপের ফলে পিছু হটেন আন্দোলনকারীরা। পরে বিক্ষিপ্ত শিক্ষার্থীরা নয়াবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। এসময় তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের ফলে আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সদরঘাটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন লাখো মানুষ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দুপুর আড়াটার দিকে সংক্ষিপ্ত এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গল ও বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘটের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান। সংবাদ সম্মেলন শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জবি প্রক্টরের অপসারণের দাবি জানান তারা। এছাড়া পুলিশের হামলায় কয়েকশ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। আন্দোলনকারীদের পক্ষে জবি শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম, রাইসুল ইসলাম নয়ন, মনিরুল ইসলাম রাজন, শফিকুল ইসলাম এবং খায়রুন নেছা এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, প্রশাসনিকভাবে কারো উপর হামলা করতে বলা হয়নি। শিক্ষার্থীদের বারবার ক্লাস পরীক্ষার পাশাপাশি আন্দোলন করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসন থেকে কেউ ওখানে যায়নি এবং কোনো হামলার নির্দেশ দেয়নি।
এ বিষয়ে পুলিশের লালবাগ জোনের ডেপুটি কমিশনার ইব্রাহিম খান বলেন, শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের আগেই বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সবাইকে যেতে দেওয়া হবে না। তারা চাইলে একটি প্রতিনিধি দলকে আমরা পৌঁছে দেব। জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তাদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা টিয়ারশেল ছোড়া হয়েছে।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হল চেয়ে আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল ও ঘেরাও কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। এবিষয়ে জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগ অতীতের সকল আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিল, এখনো আছে, আগামীতেও থাকবে।
জবি ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের আগামীদিনের কর্মসূচিতে সাথে থাকবে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের কর্মীদের সাথে নিয়ে আগামীদিনের কর্মসূচিগুলোতে পাশে থাকবো ও আন্দোলন সফল করার চেষ্টা করবো। সম্পাদনা: দীপক চৌধুরী
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)