বিস্তাররোধে সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ বিশ্লেষকদের ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে পথশিশুরা নজরদারির অভাবে ইয়াবায় সয়লাব রাজধানী
আজাদ হোসেন সুমন : মরন নেশা ইয়াবায় সয়লাব হয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। এর বিস্তাররোধে জরুরিভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র জানায়, ইয়াবার বিস্তার রাজধানীতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। টোকাই ও পথশিশুদের মাথায় টুপি পড়িয়ে এর ভেতর ইয়াবা দিয়ে ক্রেতার কাছে পাঠাচ্ছে পুরনো ঢাকার ইয়াবা ব্যাবসায়ীরা। এছাড়া এই মাদক সরবরাহকাজে পুরনো ঢাকায় সহস্রাধিক শিশু কিশোরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির অভাবে ইয়াবা রাজধানীতে প্রতিদিন বিস্তৃত হচ্ছে। রাজধানীর পাড়া-মহল্লা অলি-গলি ইয়াবায় সহজলভ্য হয়ে গেছে। ইয়াবার করালগ্রাসে উঠতি বয়সী হাজার হাজার তরুণ-যুবক বিপথগামী হচ্ছে।
ক অদ্যাক্ষরের একজন রহমতগঞ্জের বাসিন্দা। একটি কসমেটিকস কারখানা আছে। কসমেটিকস সরবরাহ করেন মৌলভীবাজারে। এক ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সুখের সংসার ছিল। ভালোভাবে সামাজিক জীবনযাপন করছিলেন, বন্ধুর ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কয়েকজন বখে যাওয়া বন্ধুর অনুরোধে প্রায় ৮ বছর আগে ইয়াবায় প্রথম সুখটান দিয়েছিলেন। তারপর থেকে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। প্রতিদিন ৩ থেকে ৫টি ইয়াবা চাই-ই চাই। প্রতি পিস ইয়াবার দাম কমপক্ষে ৩শ টাকা। ইয়াবার টাকা যোগান দিতে ৮ বছরের ব্যবসা উঠেছে ধ্বংস হয়ে গেছে। ধার-দেনাও হয়েছে প্রচুর। সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের কাছে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ভাই একটি ভুলে ফুলের বাগানের মতো সাজানো জীবন তছনছ হয়ে গেছে। ভুল করেও কেউ যেন এই অন্ধকার জগতে পা না বাড়ায়। প্রতিটি মাদকসেবী এভাবে স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবনের পরিবর্তে বেছে নিচ্ছে নিকৃষ্ট জীবন। যে জীবন শুধু ঘৃণা আর লাঞ্ছনার। কিন্তু জেনেও তারা জানে না, বুঝেও তারা বুঝে না। কিছু করার নেই। বোধশক্তিহীন জীবন্ত লাশের মতো ইয়াবার টানে অন্ধকারে দিকে ধাবিত হওয়া।
শুধু ব্যবসায়ী পেশজীবিরা নয় ধনাঢ্য পরিবারের স্কুল-কলেজগামী তরুণেরাও ঝুঁকছে এই মরণ নেশায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীজুড়ে কমপক্ষে সহস্রাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। যাদের প্রত্যেকের রয়েছে কমপক্ষে ৫ জন করে বাহক বা ক্যারিয়ার। বাহক হিসেবে শিশুকিশোর ও নারীদেরও ব্যাবহার করা হচ্ছে। এদেরকে দেওয়া হয় ক্ষেত্রভেদে দিনচুক্তিতে ৫শ থেকে এক হাজার টাকা। মোবাইলফোন হচ্ছে এ ব্যবসার মূলমন্ত্র। মোবাইলে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ইয়াবা বাহক মাধ্যমে পৌঁছে দেয় ব্যবাসায়ীরা। রাজধানীতে এক পিস ইয়াবার দাম স্থানভেদে আড়াই থেকে সাড়ে তিন’শ টাকা। এই ব্যবসায়ীরা আবার পাইকারদের কাছ থেকে প্রতি পিস ইয়াবা ৮০ থেকে ১শ টাকায় কেনে। ঢাকার পাইকাররা কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও আশপাশের মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ৫০ টাকা পিস হিসেবে কেনেন। মিয়ানমারের গহীন অরণ্যে অবস্থিত কারখানা থেকে মাফিয়া রিং লিডাররা ১০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করে ক্রেতাদের কাছে। সীমান্ত গলিয়ে কক্সবাজার হয়ে ঢাকায় খুচরা ক্রেতাদের হাতে সেটার দাম হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা।
এই মরণ নেশা এখন রাজধানীসহ সারাদেশে মুড়ি-মুড়কির মতো পাওয়া যাচ্ছে। একযুগ আগেও আন্ডারওয়ার্ল্ডে রাজত্ব করছিল ফেনসিডিল। এখন সে স্থান দখল করেছে ইয়াবা। সহজলভ্য হওয়ার সুযোগে প্রতিদিন নতুন করে শত শত তরুণ আসক্ত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে যারা আছেন, তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই এ ব্যাপারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ব্যাপারে ভাবার সময় এসেছে। সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশ থেকে জালটাকা ভারতে প্রবেশ ঠেকাতে সম্প্রতি ভারতের একটি টাস্কফোর্স টিম পুলিশ সদর দপ্তরে এসে বাংলাদেশ পুলিশের সহায়তা নিয়ে সেটা রোধ করেছে। বাংলাদেশ কেন ইয়াবারোধে এরকম বাস্তব বা কার্যকর পদেক্ষপ নিচ্ছে না। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম