দূতাবাস : আশার ছলনে ভুলি
অজয় দাশগুপ্ত
দূতাবাসগুলোর কাজকর্ম প্রায় একধরনের হয়ে থাকে। নিয়ম আর বিদেশে থাকার আনন্দে তারা মশগুল। দেশে কতকিছু ঘটে। একেকদিন সকালে চোখ মেলে খবর দেখে আমাদের বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়। শাপলার ঘটনা, গুলশানের ঘটনা আরও কত ঘটনা আমাদের সারারাত জাগিয়ে রেখেছে। দূতাবাসে যারা কাজ করেন তারাও বাংলাদেশি। তাদের চোখেও ঘুম থাকার কথা না। কিন্তু দূতাবাস ঘুমায়। এমন ভান করে যেন কিছু ঘটেনি। ঘটলেও তার কিছু যায় আসে না। সেদিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসকে ক্রেডিট দিতেই হয়। তারা সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত জঙ্গি আক্রমণের ওপর একটি খোলা মত বিনিময়ের আয়োজন করেছে।
কিন্তু কি এর মাজেজা বা কেন সেটা বোঝা গেল না। হাইকমিশনের মূল কাজ হওয়া এদেশের সরকার বিরোধী দল ও সাধারণের ভিতর আমাদের ইমেজ ও কলঙ্কহীন চারিত্র তুলে ধরা। জানি না, সে কাজ কতটুকু করছেন তারা। এখানকার সাধারণ ও পরিশ্রমী বাংলাদেশিদের ভিতর তাদের বিষয়ে তেমন কোনো আশা বা উৎসাহ নেই। একটি মত বিনিময় সভায় একাধিকবার হাইকমিশনারের মুখ লাল করে দেওয়া আমজনতা জানিয়েছিল, তাদের ভরসা নেই। সে রাতে এখানকার আওয়ামী লীগের বিচক্ষণ সভাপতি সিরাজুল হক সামাল না দিলে হয়তো লেজেগোবরেও হতে পারত অনেক কিছু।
জানি না, কেন এই চাকরিতে নিয়োজিত বেশিরভাগ মানুষই আত্মগর্ব আর ইগোর শিকার। যেখানে যান মাননীয়, মান্যবর, ইওর এক্সেলেন্সি এসব বিশেষণের বদহজমেই হয়তো এমন হয়। একশ্রেণির সুবিধাভোগীরা তেল মাখিয়ে এমন হাল করে ছাড়েন যে রাষ্ট্রদূত আর রাষ্ট্রপতির ব্যবধান মনে হতে থাকে কয়েক গজের। এখানকার দূতাবাসে তা আছে কিনা জানি না, তবে এদের কিছু কাজ দেখে মনে হয় এরাও দিকভ্রান্ত।
এই যে কথিত মুক্ত আলোচনা সেদিন কিন্তু ২১ আগস্ট। তারা কি পারবেন গ্রেনেড হামলা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে? বলতে পারবেন সেটাই ছিল জঙ্গিবাদের শুরু? বা পরিকল্পিত নিধন হামলা? যারা এসব কথা বলেন ও বিশ্বাস করেন তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা দূতাবাসের এই আয়োজন আসলে আইওয়াশ। হয়তো সরকারকে দেখানোর দরকার তাই এর আয়োজন। না হলে, বাংলাদেশিদের নিয়ে তারা বড় বড় শহরগুলোতেই এমন কাজ ও সচেতনতার শুরুটা করতে পারতেন।
আমরা যতই সিভিল সিভিল করে লাফাই না কেন, এ অবদি ওয়ান ইলেভেনের অন্যতম কুশীলব নামে পরিচিত জেনারেল মাসুদ উদ্দীনই ছিলেন কাজে এগোনো এককথার রাজদূত। বহু বিষয়ে মতান্তর থাকলেও তার দেশবোধ ছিল অসাধারণ।
নানা ধরনের বেড়াজালে ঘেরা দূতাবাসও তাদের হঠাৎ আয়োজিত এই মতবিনিময়ের কারণ যদি হয় সরকারের চোখে পড়া তবে কিছুই বলার নেই। আর যদি তারা আন্তরিক হয় তো গ-ির ভিতর থেকে বেরুতে হবে। পারবেন বলে এখন অন্তত মনে হচ্ছে না। তবু আশা করতে দোষ কি?
লেখক : সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন