মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা বাকস্বাধীনতা নয়
ড. বদরুল হাসান কচি
মন্ত্রিসভায় প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৬’। আইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশে উল্লেখ আছে, যেকোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে (বৈদ্যুতিক) মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদালত কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত মীমাংসিত কোনো বিষয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রচারণা বা প্রোপাগা-া চালালে বা অবমাননা করলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ-, এক কোটি টাকা বা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের খসড়া প্রাথমিক অনুমোদন দিয়ে সেটি আরও পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করতে আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছে মন্ত্রীসভা।
গণমাধ্যমের খবর থেকে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকে বলতে চাচ্ছেন, এটা মুক্ত আলোচনা কিংবা বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আবার কেউ বলছেন জোর খাটানো। যেমন, আমি আমার ফেইসবুক ওয়ালে দ-ের কথা শেয়ার করায় আমার এক বন্ধু মন্তব্য করেছেন ‘অনুভূতির উপর জোর খাটানো কি কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সম্ভব?’ (বিশ্বাস করি তিনি বিরুদ্ধ অবস্থান থেকে নয়, জানার আগ্রহ থেকেই এমন মন্তব্য করেছেন) জবাবে আমি বলেছিলাম, ‘যে সন্তানের ব্যবহারে আদব নেই তাকে আদব শেখায় বাধ্য করা অবশ্যই অভিভাবকের দায়িত্ব।’ ঠিক এ জায়গাটিতে একটু বড় করে ব্যাখ্যা খুঁজতে চাই এখানে।
নাগরিকরা যদি কোনো ভুল পথে হাঁটে সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের পথ দেখিয়ে দেওয়া। আর সেই সঠিক পন্থাটি হচ্ছে আইন। রাষ্ট্রীয় স্বাভাবিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য কিছু আইন বহুবছর যাবত বিদ্যমান। যেমন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধি, দ-বিধি ইত্যাদি। পাশাপাশি সর্বোচ্চ আইন সংবিধান তো রয়েছেই। দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও শৃঙ্খলা আরও সুন্দর করার স্বার্থে রাষ্ট্র প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে আরও আইন প্রণয়ন করে। তেমনি একটি পরিস্থিতিতে তৈরি করতে হচ্ছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৬’।
বর্তমান সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল হিসেবে দেশের চার ভাগের একভাগ মানুষ এখন ইন্টারনেটসেবা গ্রহণ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এখন প্রায় অর্ধকোটি মানুষের উপস্থিতি নিয়মিত। ভালো দিকের পাশাপাশি খারাপ দিক হলোÑ একশ্রেণির মানুষ বুঝে না বুঝে নানান রকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন মানুষের মনে। এ বিভ্রান্তি থেকে বাদ যাচ্ছেন না দেশের গৌরবের দুটো জায়গা মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অতীতে আমরা দেখেছি, দেশের কোন কোন রাজনৈতিক দলের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা এবং ইতিহাস নিয়ে বিতর্কমূলক নানান বক্তব্য দিয়েছেন, আর সেটা তাদের অনুসারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে অন্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। জাতির জনককে নিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশে বিতর্ক নেই, কেবল আমরাই স্পর্ধা দেখাই। এখনও সভ্য হতে পারিনি তা বোধহয় আমরা সকলেই জানি। কিন্তু তাই বলে এতটা অসভ্য হয়ে আছি।
সেই যুক্তিতে বলছি, শৃঙ্খলার স্বার্থে অসভ্যকে সভ্য করতে রাষ্ট্রকে কখনও কখনও কঠোর হতে হয়। সেই পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন আইন করার দাবি জানিয়ে এসেছিল সচেতন নাগরিকেরা। সরকার সেই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে ধন্যবাদ। তাছাড়া আরও একটি কথা না বললেই নয়, সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সমালোচনা করা আর উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রোপাগা-া বা অবমাননা করা দুটো এক জিনিস নয়।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন