
আমাদের অর্থনীতির মুখোমুখি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. দেলোয়ার হোসেন দুই দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী করার একটি এজেন্ডা হতে পারে জন কেরির বাংলাদেশ সফর
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
ভারতে যাওয়ার প্রাক্কালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। তার এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সাম্প্রতিককালে দুই দেশের মধ্যে যে সহযোগিতামূলক তৎপরতা আমরা দেখছি, তার একটি অবস্থান, কমপ্লিট একটি সেইপ দেওয়া। একই সঙ্গে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, নিরাপত্তা সংলাপসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, মূলত দুই দেশের সম্পর্ককে উচ্চমাত্রায় নেওয়া, জিএসপি সুবিধার বিষয়টিও রয়েছে। যাকে আমরা সবসময়ই বলছি, এটা একটি রাজনৈতিক ইস্যু। এটা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এসব বিষয় নিয়ে একধরনের আলোচনা হবে বলেই আমরা মনে হয়। দুই দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করা একটি এজেন্ডা হতে পারে জন কেরির বাংলাদেশ সফর। বিশেষ করে, জঙ্গিবাদ ইস্যুতে যেসব সহযোগিতার কথা এখনো পর্যন্ত আমরা জানি, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে হয়তো একটা কমপ্লিট সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংযুক্ত হয়ে, কিভাবে কি ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে আলোচনায় আসতে পারে তাও। একই সঙ্গে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক রয়েছে, বোঝাপড়া রয়েছে সেসবও আলোচনায় জায়গা পাবে নিশ্চয়ই।
তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের বিষয়টি অতীতের ব্যাপার। বাইরে থেকে মানুষ অনেক কিছুই মনে করেন, অনেক হৈ চৈ হয়। দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা কিংবা উষ্ণতা না থাকলে সম্পর্ক থাকে কী করে? আমার মনে হয়, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো রয়েছে, যা আগামীতে আরও শক্তিশালী হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নত হওয়ার ক্ষেত্রে ভারত মিডিয়ার ভূমিকা পালন করছে কিনা এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে যা বোঝা যায়, ভারতের একটি ভূমিকা রয়েছে এক্ষেত্রে। এজন্যই রয়েছে, কূটনীতিতে দুই দেশের মধ্যে যখন কথাবার্তা হয়, তখন তা আর দুই দেশের মধ্যে থাকে না, সেখানে অনেক পক্ষই থাকে। ফলে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে যে উষ্ণতাÑ এই পুরো বিষয়টিই এখানে ইতিবাচক ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে।
ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যে বৈঠক হবে সেখানে দুটি বিষয়কে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আমি করি। দুটি জিনিস বাংলাদেশের খুবই দরকার। একটি হচ্ছেÑ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডিউটি ফ্রি এক্সেস, যা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। এই ডিউটি ফ্রি এক্সেসের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। আর জিএসপি সুবিধা, যা স্থগিত রয়েছে তা যেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, সে বিষয়টি জোরালভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এ দুটি জায়গায় বাংলাদেশের ফোকাস জরুরি। সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক ভূমিকার কথা হয়তো আসতে পারে। বাংলাদেশের নৌ-বাহিনীর সামর্থ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক হস্তপেক্ষ বা চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনার কোনো প্রেক্ষাপট এখন আমি দেখছি না। তবে এটা তাদের একটা এজেন্ডা, তা তাদের মধ্যে সবসময়ই কাজ করে। আমাদের এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া থাকে বা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এসব ইস্যু সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের ছিল। কিন্তু আগের মতো সরাসরি কোনো অবস্থান নিয়ে হস্তক্ষেপ করার প্রয়াস চালানোর চেষ্টা করবে বলে আমার মনে হয় না। আপনাকে মনে রাখতে হবে, কোনো একটি দেশের রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে তা তার অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার ওপর ছেড়ে দিতে হয়, সাধারণত তা-ই হয়। এখানে হস্তক্ষেপ করে কোনো সুবিধা করা যায় না বলেও মনে করেন এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন
