ইস্যু অ্যান্ড আইডিয়া জেলখাটা ও টাকার বিনিময়ে কি দেশের জন্মের বিরোধিতা করা যাবে
ড. কালাম আজাদ ষ অস্ট্রেলিয়া থেকে
দেশের ক্যাবিনেট নীতিগতভাবে একটি খসড়া আইন (দ্য ডিজিটাল সিকুরিটি ল, ২০১৬) অনুমোদন করেছে। ওই আইন অনুযায়ী, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কোনো অপপ্রচার চালালে তাকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ- এবং এক কোটি টাকা জরিমানা করা যাবে। আর সর্বনিম্ন সাজা নির্ধারণ করা হয়েছে, তিন বছর কারাদ- এবং এক কোটি টাকা জরিমানা। প্রস্তাবিত আইনটি দেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে এক সূত্রে গেঁথেছে বলে সরকারকে ধন্যবাদ। কেননা, বঙ্গবন্ধুর শাসনামল নিয়ে অনেক বিতর্কের সুযোগ থাকলেও তার নামে দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং সে কারণে তিনিই যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলোÑ দেশের সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য প্রস্তাবিত আইনে যে সাজার কথা বলা হয়েছে তা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
দেশের বা দেশের স্বাধীনতার বা স্বাধীনতার ইতিহাসের বিরুদ্ধাচ্চারণ অবশ্যই একটি অপরাধ। কিন্তু অন্যান্য অপরাধ থেকে এ অপরাধের একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সেটা হলো, এ অপরাধটি মৌলিক রাজনৈতিক অপরাধ। মানুষ খুন, সম্পত্তি ধ্বংস, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ, মানহানি, দুর্নীতি, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ কোনো ব্যক্তি বা কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় এবং এসব অপরাধ সংঘটিত হলে যে ক্ষতি হয় তা টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যেতে পারে। আবার, এসব অপরাধী সাধারণত ব্যক্তিগত স্বার্থ, লোভ-লালসা, ঘৃণা ইত্যাদির বশবর্তী হয়ে এগুলো ঘটায়।
কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে সংঘটিত যেকোনো অপরাধ নিঃসন্দেহে গোটা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ। গোটা দেশের অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি, পররাষ্ট্রনীতি, নিরাপত্তা ইত্যাদির বিরুদ্ধে অপরাধ। দেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে অপরাধ। আর দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতোহাস মানে দেশের জন্মের ইতিহাস। যে বা যারা দেশের জন্মের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়, সে বা তারা কি এদেশের নাগরিক হতে পারে? তাদের অপরাধ কি টাকা দিয়ে মাপা যায়? তারা কি নিছক ব্যক্তিগত স্বার্থ, লোভ-লালসা, ঘৃণা ইত্যাদির বশবর্তী হয়ে এগুলো ঘটায়? এসব প্রশ্নের উত্তর একটিইÑ আর সেটি হলÑ ‘না’।
তাহলে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রস্তাবিত সাজাÑ সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ- ও এক কোটি টাকা জরিমানা এবং সর্বনিম্ন তিন বছর কারাদ- ও এক কোটি টাকা জরিমানাÑ কতটা যুক্তিসঙ্গত? এখানে ‘যাবজ্জীবন কারাদ-’ বলতে আমারা সাধারণভাবে জানি ১৪ বছরের বেশি নয়। আর, টাকা? যার আছে তার কাছে এখন এক কোটি টাকা কিছুই না। যার নাই তার কাছ থেকে টাকাটা কীভাবে আদায় করা যাবে? আবার, যেখানে এ ধরনের অপপ্রচারকারীদের অনেকেই ‘শহিদ’ হতে সদা প্রস্তুত সেখানে এই ১৪ বছরের জেল আর এক কোটি টাকার সাজা হাস্যকর ছাড়া কী?
আসলে, আগেই উল্লেখ করেছি, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অপপ্রচার একটি মৌলিক রাজনৈতিক অপরাধ। আর এ রাজনৈতিক অপরাধের সাজাও হওয়া দরকার রাজনৈতিক। এবং এ রাজনৈতিক সাজাটি হতে পারেÑ অপরাধীর নাগরিকত্ব বাতিল। কারণ, যে বা যারা কোনো দেশের জন্মের বিরোধিতা করে সে বা তারা সে দেশের নাগরিক হয় কোন যুক্তিতে?