ট্রাইব্যুনাল সরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে সরাতে হবে
এম কবির: মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরাতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে সরাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঘাতক দালার নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
ট্রাইব্যুনাল সরাতে আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি গতকাল বুধবার আমাদের সময় ডটকমকে ও আমাদের অর্থনীতিকে এ কথা বলেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেওয়ার চিঠি দেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য ট্রাইব্যুনাল সরানোর কথা বলা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল যদি সরাতে হয় তাহলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে সরাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তে আমরা ক্ষুব্ধ। এটা ৮-১০টা ট্রাইব্যুনালের মতো নয়। এই ট্রাইব্যুনালের জন্য কতবার রাস্তায় থাকতে হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছিলেন, বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে ৩০ লাখ শহিদের কঙ্কালের ওপরে। সেই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে কোনো তোঘলকি কারবার সহ্য করব না। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বহু জায়গা আছে সেখানে বিল্ডিং করা যেতে পারে। এই জায়গা এমনি এমনি আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। এটা স্থায়ীভাবে চাই।’
ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনতাসির মামুন আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেওয়ার চিঠিতে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং আমরা আন্দোলনে যাব।’
তিনি বলেন, আগামী শনিবার আমাদের প্রেস কনফারেন্স আছে সেখানে বিস্তারিত জানাব।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার আগে ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জায়গা নির্ধারণ নিয়ে ২০০৯ সালে অনেক আলোচনা হয়। প্রথমে আবদুল গনি রোডে একটি জায়গায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলা হলে তখন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ কয়েকটি সংগঠন এর বিরোধিতা করেন। তারা তখন পুরান হাইকোর্ট ভবনের নিচতলায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বললেও সুপ্রিম কোর্ট তা মেনে নেয়নি।
সুশীলসমাজ ও শহিদ পরিবারের সদস্যরা ট্রাইব্যুনালের স্থান নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন করেন। হাইকোর্ট ভবনে ট্রাইব্যুনাল নির্মাণের দাবিও জানান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে কবি শামসুর রাহমানকে সভাপতি করে নির্মূল কমিটি দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্গঠন করা হয়। সেই থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নির্মূল কমিটি সারাদেশে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, পুস্তিকা, লিফলেট, পোস্টার প্রভৃতি প্রকাশের মাধ্যমে জনমত গঠনে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, প্রজন্ম ‘৭১, মুুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ অনেক সংগঠনও এগিয়ে আসে।
এরপর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি পক্ষে শাহরিয়ার কবির, প্রফেসর কবীর চৌধুরী সাবেক বিচারপতি গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ২০০৯ সালে ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়। চিঠিতে পুরান হাইকোর্ট ভবনে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়। চিঠিতে তারা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষ হওয়ার পর সেখানে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের জাদুঘর করা হবে।
সে সময় প্রধানমন্ত্রী তা মেনে নেন। এর পর শুরু হয় বিচার। এখন আবার ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট ভবনের দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আইন সচিবকে অনুরোধ করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার ১৮ আগস্ট চিঠি দেন। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের পত্র বিতরণ শাখা থেকে ওই চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে পুরান হাইকোর্ট ভবনের দখল হস্তান্তর করার জন্য বলা হয়।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরেই ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিষ্পত্তি খাতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। আদালত কক্ষ মেরামত, চুনকাম ও ফুলের বাগান তৈরি বাবদ ব্যয় করা হয় ৫ কোটি টাকা। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রসিকিউশন গঠন করা হয়। সম্পাদনা: রাশিদ রিয়াজ