আমার ক্ষমতা হারানোর ভয় নেই জীবন হারানোরও নেই : প্রধানমন্ত্রী
মাহমুদুল আলম : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে অর্থ ঢেলে বিদেশে লবিং করার অভিযোগ তুলে, বিচার চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের যে সিদ্ধান্ত তাতে আমাদের অটল থাকতে হবে। আপনারা জানেন যে, আমরা তাতে থাকবো। কারণ আমার ক্ষমতা হারানোরও ভয় নেই, জীবন হারানোরও ভয় নেই।’
নিজ কার্যালয়ে ‘দুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তা ভাতা/অনুদানের চেক হস্তান্তর’ অনুষ্ঠানে গতকাল বুধবার এসব কথা বলেন তিনি। সমালোচনা যেন গঠনমূলক হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বক্তব্যে বিএনপির নতুন কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সন্তানদের থাকার প্রসঙ্গ তুলে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কি নাÑ সে প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনুমোদিত বিএনপির স্থায়ী কমিটি, ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ও ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এবং আমৃত্যু কারাদ-ে দ-িত প্রয়াত আব্দুল আলীমের ছেলে।
অনুষ্ঠানে নতুন কমিটিতে কারা স্থান পেয়েছে- সে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব যুদ্ধাপরাধী, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, এদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতা করেছে, যাদের বিচার হয়েছে বাংলার মাটিতেÑ তাদেরই বংশধর, তাদেরই ছেলেপেলে, তাদেরকে নিয়ে যদি কোনো দল গঠন করা হয়, তাহলে সেই দল কি এই দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে? সেই দল কি এদেশের মানুষের জন্য শান্তি আনতে পারে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা দেশের মানুষের শান্তিতে বিশ্বাস করে না, উন্নয়নে বিশ্বাস করে না, এটা হল বাস্তবতা।’
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশপাশি সংবাদপত্রে জড়িত থাকার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি জানান তার বাবা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রতিনিধি। শেখ হাসিনা বলেন, তিনিও একসময়, যখন ছাত্র রাজনীতি করেছেন তখন পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেই সময় নিজে হাতে করে পত্রিকা বিক্রি করা থেকে শুরু করে পত্রিকায় কাজ করা, সেটাও তিনি করেছেন। কাজেই আমি কিন্তু আপনাদেরই পরিবারেরই একজন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ১৯৬ জন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারকে মোট ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা নবম ওয়েজ বোর্ডের দাবি জানালে সে বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার কাছে দাবি করার প্রয়োজন হয় না। ট্রাস্টের দাবি আপনারা কেউ করেননি। অষ্টম ওয়েজ বোর্ড আমরা দিয়েছি। আপনারা নবমের দাবি তুলেছেন। এখানে মন্ত্রী আছেন, আমি বলবো, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের ‘দায়িত্বের সঙ্গে কর্তব্য’ পালনের পরামর্শও দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ভালো, কিন্তু সে স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে দায়িত্বও পালন করতে হয়, দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি দায়িত্ব।
সমালোচনা যেন গঠনমূলক হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে বেসরকারি খাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। একটাই উদ্দেশ্য ছিল, আমাদের দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কার বিভিন্ন হত্যাকা- ও হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যখন থাকে তখন জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়। সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক কেউই বাদ যায়নি তাদের অত্যাচারের হাত থেকে। সাংবাদিকদের ধরে নিয়ে যে অকথ্য নির্যাতন করেছে, অনেকেই সে নির্যাতনের চিহ্ন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী