মাহবুবকে প্রধান বিচারপতি রিভিউয়ের আইন নেই, আমরা দিয়েছি
এস এম নূর মোহাম্মদ : ‘রিভিউয়েরই কোনো আইন নাই। এরপরও আমরা সেই সুযোগ দিয়েছি। যদিও এখানে কনস্টিটিউশনাল ব্যারিয়ার রয়েছে। আপনি জানেন, রিভিউতে যুক্তি খুবই কম থাকে। আপনি শুনানি শুরু করুন।’ গতকাল বুধবার মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন শুনানিতে খন্দকার মাহবুবকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
বুধবার কাসেম আলীর আইনজীবীর করা সময়ের আবেদন নাকচ করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে রিভিউ শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। এর পরপরই আদালত রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আদালত বলেন, রোববার এটি এক নম্বর আইটেমে থাকবে।
গতকাল কার্যতালিকার ৫ নম্বরে থাকা রিভিউ আবেদন সাড়ে ৯টার পর শুনানির জন্য আসলে খন্দকার মাহবুব হোসেন দাঁড়ান। শুরুতেই খন্দকার মাহবুব সময় আবেদনের কথা বললে প্রধান বিচারপতি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি যে যুক্তিতে সময় চেয়েছেন, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমার ব্রাদার বিচারপতি এখানে আছেন। তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন। আপনি এরপর ছয় সপ্তাহ, যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। এরমধ্যে ২৫ জুলাই আপনি সময়ের আবেদন করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও আমরা সময় দিয়েছি। অথচ রিভিউয়েরই কোনো আইন নাই। এরপরও আমরা সেই সুযোগ দিয়েছি। যদিও এখানে কনস্টিটিউশনাল ব্যারিয়ার রয়েছে। আর তার ছেলেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার আপনি এখন কথা বলছেন।
খন্দকার মাহবুব বলেন, আমি এভাবে বলিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার পিটিশনে রয়েছে।
এ পর্যায়ে খন্দকার বলেন, তিনি শুধু তার ছেলেই নন, অ্যাডভোকেটও। তার কাছে সব কাগজপত্র রয়েছে। আমি গতকাল রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। সে যদি জেলেও থাকতো তাহলে জুনিয়র পাঠিয়ে তা আনার চেষ্টা করতাম। আমার কাছে কোনো কাগজপত্র নেই। আমি অসহায়।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা কোনো যুক্তি না। আর আপনি এবং শাজাহান সাব এই মামলা করছেন। আপনি জানেন, রিভিউতে যুক্তি খুবই কম থাকে। আমরা রায়ের বাইরে যাব না। এ সময় খন্দকার মাহবুব সময়ের জন্য বারবার বলতে থাকলে জবাবে আদালত বলেন, আমরা দুঃখিত।
এ সময় খন্দকার মাহবুব বলেন, আমার কাছে পেপারবুকও নেই। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার কাছে ওইদিনও পেপার বুক ছিল। এখন নেই কেন? খন্দকার মাহবুব বলেন, ওইদিনের পর ওরা নিয়ে গেছে। তখন প্রধান বিচারপতি নিজের পেপারবুক খন্দকার মাহবুবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, আমি আমার পেপারবুক দিয়ে দিচ্ছি। আপনি শুনানি শুরু করেন। আমরা রোববারে শেষ করবো। এসময় আবারও খন্দকার মাহবুব অন্তত এক সপ্তাহ সময় চান।
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাকে আমি বিগত ৪০ বছর যাবত চিনি। ওয়ার ক্রাইম নিয়ে আপনার ইয়ে আমি জানি। আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি। এগুলো কেন করছেন। এর আগে বলেছিলেন মানসিক অবস্থা, দেশের পরিস্থিতি দেখিয়ে সময় নিয়েছেন। আপনি শুরু করেন।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও তার হাতে থাকা পেপারবুক খন্দকার মাহবুবের সামনে ডায়াসে এগিয়ে দেন। তবে পেপারবুক ছাড়াই শুরু করতে পারবেন বলে জানান খন্দকার মাহবুব। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি শুরু করেন, আপনার স্মরণশক্তি ভালো আমি জানি। তখন খন্দকার মাহবুব বলেন, আমি একটা অভিযোগের ওপর বক্তব্য রাখব। যে অভিযোগে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ১১ নম্বর অভিযোগ। পরে খন্দকার মাহবুব শুরু করলে এক পর্যায়ে আদালত রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। সম্পাদনা: আ. হাকিম