হজ মহাঐক্যের জয়গান
মাওলানা মুহাম্মদ আরাফাত
ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম হজ। হজ মানে দৃঢ় ইচ্ছা করা। হজ মানে, মহান রাজাধিরাজ আল্লাহ পাকের সান্যিধ্য লাভে নির্দিষ্ট দিনে কিছু নিয়ম নীতির অনুসরণ করা। মুনিবের দরবারে গোলামের হাজিরা দেওয়া। ফরজ ইবাদতের হাজিরা। অস্বীকারকারী হবে ঈমানহারা। এ যেন দৈহিক আত্মিক ও আর্থিক ইবাদতের সমন্বয় সাধন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুমিনের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। যে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিৎ, নিশ্চয় আল্লাহ সৃষ্টিকুলের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। সুরা আল ইমরান: ৯৭
হজ প্রেমিকের ভালবাসার আবেগে প্রেমাস্পদের আপ্লুত হওয়া। সাদা ছেঁড়া কাপড়ে জড়িয়ে নিজেকে সপে দেওয়া। যেন নিজেকে কবর ঘরের বরসাঁজে সাঁজিয়ে তোলা। এ যেন সাঁজানো পৃথিবীকে চির বিদায় জানানোর ঘোষণা দেওয়া। হজ মানে বায়তুল্লাহর কালো গিলাফের সোনালি হরফে চোখ জুড়ানো। কালো পাথরে চুমো খেয়ে আত্মশুদ্ধি করা। গোনাহের কালো দাগ মোচন করা। গোনাহমুক্ত নতুন জীবনের শপথ গ্রহণ করা। যেন সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতক। সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি কোনোরুপ অশ্লীল কথা বা গোনাহের কাজে লিপ্ত না হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ সম্পন্ন করল, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিস্পাপ হয়ে ফিরল। বুখারি শরিফ: ১৪৩১
হজ ইবরাহিমি আজানের প্রতিধ্বনি। মুসলিম উম্মাহর মিলনমেলা। হাজিদের পদভারে মক্কা নগরী পরিণত হয় ধূসর মরুর সাহারা। হাজিগণ ইবরাহিমি চেতনায় নিজেকে করে উজ্জীবিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং উটে চড়ে দূরপথ পাড়ি দিয়ে। সুরা হজ: ২৭
হাজিগণ সেলাইবিহীন সাদা কাপড়ে এলোমেলো চুল নিয়ে পাগল বেশে সাফা মারওয়া দৌড়াদৌড়ি করে। তাওয়াফে তাওয়াফে প্রভূর দরবারে করে আত্মসমর্পন। সাফা মারওয়া প্রভূর পরিচয় লাভের অন্যতম নিদর্শন। কুরআনুল কারিমের ঘোষণা, সাফা এবং মারওয়া আল্লাহ পাকের নিদর্শনাবলির অন্যতম। সুরা বাকারা: ১৫৮
বায়তুল্লাহর মুসাফির কখনো যমযম পাড়ে কুদরতি পানিতে তৃষ্ণা নিবারণ করে। কখনো কালো ঘরের চারপাশে খোদার প্রেমে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কখনো মিনায় কখনো মুযদালিফায় কখনো বা আরাফায় মকবুল হজ্বের মিনতি করে। গুনাহ মাফের দাবি নিয়ে বুকে জান্নাতের আশা বেঁধে অবস্থান করে। হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. বলেন, এক ওমরা আদায় করার পর পরবর্তী ওমরা আদায় করা মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরুপ। আর মাকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত। বুখারি শরিফ: ১৬৫৮
লাব্বাইক লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত করে বায়তুল্লাহর চত্বর। মক্কার ইথারে ইথারে ভাসে খোদা ভক্তদের লাব্বাইক লাব্বাইক চিৎকার। অশ্রুজলে বুক ভাসিয়ে হাউমাউ করে কাঁদে বায়তুল্লাহর মেহমান। নবি প্রেমিকরা নবীপ্রেমের নজরানা দেয় মদিনার ধূলিকণা গায়ে মেখে। আর সালাত সালাম করে নবিজির রওজার পাশে। হজ যেন পূণ্যের এক মহাসমাবেশ।
ধনী গরিব, আমির ফকির, রাজা প্রজা সকল ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে এক পোশাকে মহান প্রভুর দরবারে এক সুরে এক তালে লাব্বাইক লাব্বাইক বলে হাজিরা দেয়। গায় ভ্রাত্বিত্যের জয়গান। তাই প্রভুর দরবারে এই আকুতি, কবুল কর বায়তুল্লাহর তরে আমাদের মিনতি।
লেখক: শিক্ষক, জামিয়াতুস সালাম মুগদা, ঢাকা