জন কেরির সাক্ষাৎও পাচ্ছে না বিএনপি!
শায়েখ হাসান : ক্রমেই আন্তর্জাতিক ডেলিগেটদের কাছে উপেক্ষিত হয়ে পড়ছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দেশে আন্তর্জাতিক কোনো কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব এলেও বিএনপি তাদের দেখা পাচ্ছে না। চলতি বছর দু’দফা নিশা দেশাইয়ের দেখা পায়নি বিএনপি। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীরও দেখা পাওয়া যায়নি। আগামী সপ্তাহে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসতে যাওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিরও দেখা পাচ্ছে না তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলটি।
একদিনের সফরে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদারের প্রয়াস থাকবে তার এ সফরে। বাংলাদেশে এটি হবে কেরির প্রথম সফর। তার সম্ভাব্য সফরসূচির বিষয়টি গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।
জন কেরি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া পেশাজীবী, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানা গেছে। কিন্তু তার দেখা পাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বা দলের কোনো নেতা।
বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে কোনো সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। তবে চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে বৈঠকের সময় ঠিক হলে জানিয়ে দেওয়া হবে’।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, জন কেরি সফরকালে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহ প্রকাশ করলে, প্রধান বিরোধীদল হিসেবে জাতীয় পার্টির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া আছে। তবে এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির মুখপাত্র হিসেবে রওশন এরশাদই বৈঠকে বসতে পারবেন জন কেরির সঙ্গে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নন।
দেশে পর পর দু’দফা জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তা ইস্যুতে ১০ জুলাই দুদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। ব্যস্ত সফরে এই উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছাড়াও বেসামরিক বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান হত্যার পর বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন নিশা দেশাই। তখনও তিনি প্রধানমন্ত্রী, বেশ কয়েকজন মন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু এ দুটি সফরের একটিতেও দেখা হয়নি খালেদা জিয়ার সঙ্গে। অথচ নিশা দেশাইয়ের সঙ্গে তিনি দীর্ঘ দেড় ঘণ্টাও বৈঠক করেছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে নিশা বিএনপি-প্রধানের বাসায় গিয়েই বৈঠক করেন। এছাড়া প্রতিবারই তিনি বাংলাদেশ সফরে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক-আল হামাদ-আল সাবাহও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেননি।
এদিকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ‘বিএনপির পতনের শেষ দরজা দেখা হয়ে গেছে’ ধরনের মনোভাব পাওয়া গেছে। নেতারা বলছেন, একদিকে রাজপথের আন্দোলনে বিএনপির ব্যর্থতা, অন্যদিকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে ধীরগতি। এমনকি গত দুয়েক বছরে কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির কোনো ‘ক্লোজড ডোর বৈঠক’ও হয়নি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দলের কূটনৈতিক লবিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের উপর সরকারের চাপ। এমন পরিস্থিতিতে বেশ বেসামাল অবস্থায় পড়েছে দলটি।
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী