৪৯ দূতাবাস ঘিরে ‘ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ’ গঠনের পরিকল্পনা
আমিনুর রহমান তাজ: হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গিহামলার পর ডিপ্লোম্যাটিক জোনের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশি কূটনীতিকদের নিñিদ্র নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশানে ৪৯টি দূতাবাসকে ঘিরে ‘ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ’ গঠনের পরিকল্পনা করছে পুলিশ। এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাবও তৈরি করা হয়েছে।
গত ১ জুলাই গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় জঙ্গিহামলার পর ডিপ্লোম্যাটিক জোনে অবস্থিত কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। ওই হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ ব্যক্তি নিহত হয়। গুলশানের প্রবেশপথে ১৮টি চেকপোস্ট থাকার পরও সেদিন জঙ্গিরা কিভাবে হলি আর্টিজানে প্রবেশ করল তা নিয়েও উদ্বিগ্ন পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। এ ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে জঙ্গিহামলার ঘটনা স্বভাবতই ভাবিয়ে তুলেছে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।
এসব ঘটনা মাথায় রেখেই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিহামলার পর একটি নিরাপত্তা ছকও প্রণয়ন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোন। গত ১১ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠানো ওই প্রস্তাবে গুলশান, বনানী ও বারিধারায় অবস্থিত ৪৯টি দূতাবাসকে একই নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত এলাকাটির নামকরণ করা হবে ‘ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ’।
বর্তমানে গুলশান, বনানী ও বারিধারায় মোট ৪৯টি কূটনৈতিক স্থাপনা রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে দূতাবাস, বাসভবন, ক্লাবসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র। এসব স্থানগুলোতে রয়েছে বিদেশিদের অবাধ চলাফেরা। ৬টি দূতাবাসের অবস্থান গুলশান বারিধারা এলাকার বাইরে। এগুলো হচ্ছে- ভারত, ভিয়েতনাম, ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া ও মায়ানমার।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে সব দূতাবাসকে একটি স্থানে আনা প্রয়োজন। এতে পুলিশের নজরদারি সহজ হবে।
প্রস্তাবে এও উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে যেভাবে দূতাবাসগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাতে পুলিশের পক্ষে পূর্ণ নজরদারি করা সম্ভব নয়। প্রস্তাবে বেশ কয়েকটি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে গুলশান-কালাচাঁদপুর সংযোগ সড়ক, ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছনের রাস্তা, গুলশান বনানী সংযোগ সড়ক, ৬২ ও ৬৩ নম্বর ক্রসিং সড়ক ৫০,৫১,৫৩, ৯১ও ৯২ নম্বর সড়ক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশান জোনে কর্তব্যরত এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিহামলার পর গুলশানে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে গুলশানের প্রবেশপথগুলোতে ১৮টি চেকপোস্ট রয়েছে। চ্যান্সেরি পুলিশের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান ও থানার মোবাইল টিমগুলো নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও মাঠপর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অর্ধশতাধিক ‘ফিল্ড ওয়াচার’। এরা পুরো গুলশানজুড়েই নজরদারি করছে।
মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর গুলশানের নিরাপত্তা পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব আসতেই পারে। তবে বিষয়টি এখনো আমার নলেজে আসেনি। ডিসি বলেন, জঙ্গিহামলার পর গুলশানের নিরাপত্তা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি