রামপালে অর্থায়ন বন্ধ করতে এক্সিম ব্যাংককে ৪১ দেশের ১৭৫ প্রতিষ্ঠানের অনুরোধ
অনির্বাণ বড়ুয়া : বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ঠেকাতে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আন্দোলন করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাংকট্র্যাক ডট অর্গ রামপালে অর্থায়ন বন্ধ করতে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের প্রতি অনুরোধপত্র প্রকাশ করেছে। ‘এ গ্লোবাল কল টু এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’ শিরোনামে ওইপত্রে তারা রামপালের ফলে পরিবেশের ক্ষতির বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে ব্যাংকটিকে অর্থায়ন বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে। ওই পত্রটি নিয়ে ব্যাংকট্র্যাক একটি বৈশ্বিক ক্যাম্পেইনও চালাচ্ছে। যেখানে এ পর্যন্ত ৪১টি দেশের ১৭৫টি প্রতিষ্ঠান স্বাক্ষর করেছে।
পত্রটি স্বাক্ষরকারীদের পক্ষে ব্যাংকট্র্যাকের ডিরেক্টর জন ফ্রেইজেনস সরাসরি ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী পরিচালক ইয়াদুভান্দ্রা মাথুরের উদ্দেশে লিখেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, আপনার প্রতিষ্ঠান রামপালের ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়নের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এটি আমাদের চিন্তিত করেছে। কারণ এ বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার উপর সরাসরি হুমকি নয় বরং এটি বিশ্ববিখ্যাত সুন্দরবন ও বিশ্ব জলবায়ুর উপর সরাসরি হুমকি।
পত্রে উল্লেখ করা হয়, এক্সিম ব্যাংকের সিটিজে চার্টারে বলা আছে, বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে ব্যাংকটি তার বাধ্যবাধকতাকে স্বীকার করে এবং ভারতের নাগরিক ও বিশ্বের কমিউনিটিকে তারা অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে।
পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া আইনে বলা আছে, জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বোর্ড ব্যাংকটির ব্যবসা নীতিমালার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
২০ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার উপর হুমকি, ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, প্রবাদপ্রতীম প্রাণী বাঘ, জলবায়ুর চলমান সমস্যাকে আরও গভীর করবে এ কয়েকটি পয়েন্টে চিঠিটিতে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়।
এতে বলা হয়, ইতোমধ্যেই গ্রিনহাউস গ্যাসে ভরা বায়ুম-লে এ প্রকল্প প্রতি বছর অতিরিক্ত ৭৯ লাখ টন কার্বন ডাই অক্সাইড যোগ করবে। এ প্রক্রিয়া চলবে আগামী ২৫ বছর পর্যন্ত। গত বছর প্যারিসে বিশ্ব নেতারা বিশ্বের তাপমাত্রার বৃদ্ধিকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না বলে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। যা বাস্তবায়নে সব ধরনের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করা জরুরি।
রামপালের কয়লা বহন করার জন্য সুন্দরবনের নদীপথ ব্যবহার করা হবে উল্লেখ করে পত্রে বলা হয়, ইতোপূর্বে এসব নদীতে তেলভর্তি জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কয়লার ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে আশঙ্কা করেন তারা।
ইতোমধ্যে দেশের আন্দোলনকারীরাও এসব যুক্তি তুলে ধরেছেন বার বার। তাদের দাবি বিশাল বিশাল জাহাজের চলাচল জলজ প্রাণিদের অবাধ বিচরণকে বাধাগ্রস্ত করবে।
পত্রে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানের উপর হুমকিস্বরূপ। এখানকার কেওড়া গাছের উপর হরিণ নির্ভরশীল, হরিনের উপর বাঘ। তাই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশ্বে যে কয়টি বেঙ্গল টাইগার বেঁচে আছে তাদের জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।
এসব উল্লেখপূর্বক ব্যাংকট্র্যাক এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে অনুরোধ করে বৈশ্বিক স্বার্থে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়ন থেকে বিরত থাকতে।
উল্লেখ্য, ব্যাংকট্র্যাক পরিবেশের ক্ষতির বিবেচনায় বিশ্বের ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে ব্যাংকের বিনিয়োগ পর্যালোচনা করে।
ব্যাংকট্র্যাকের ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ৩৩টি, বাংলাদেশের ৩০টি, ভারতের ২১টি, জার্মানির ১১টি, অস্ট্রেলিয়ার ৮টি ও সুইজারল্যান্ডের ৮টি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম