মঞ্চে উঠেছিল গীতা পাঠ করতে যাকে প্রকাশ বলা হচ্ছে ফ্রান্সে তার নাম কৌশিক : রাষ্ট্রদূত শহিদুল
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাসকে নিয়ে একই মঞ্চে ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম- বিষয়টি প্রবাসীদের অনেকের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম বলছেন একেবারেই ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, যাকে প্রকাশ হিসাবে পরিচয় দেওয়া হচ্ছে তার নাম প্রকাশ এটা আমার জানা নেই। কারণ তিনি অফিসিয়ালী এখানে কৌশিক নামে পরিচিত। রাজনৈতিক আশ্রয়ে তিনি ফ্রান্সে আছেন বলে আওয়ামী লীগের এখানের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছ থেকে শুনেছি।
একজন পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসীর সঙ্গে একই মঞ্চে কেমন করে আপনি উঠেছেন জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, দেখুন তিনি যে সন্ত্রাসী এটা আমার জানা নেই। কারণ ওই অনুষ্ঠানে তিনি কোনো অতিথিও নন। তিনি একজন গীতা পাঠক হিসাবে মঞ্চে আসেন। একটি অনুষ্ঠানের যারা আয়োজন করেন আসলে তারা জানেন যে, তাদের অনুষ্ঠানে কারা কারা আসছেন। আমার পক্ষেতো আর পুরো অনুষ্ঠানে কারা কারা আসেন বা আসবেন সেই লিস্ট আগে আয়োজকদের কাছ থেকে চেয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশী কমিউনিটির অনুষ্ঠানে যেতে হয়।
১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রান্স আওয়ামী লীগের একাংশের ব্যানারে আয়োজিত আলোচনা সভায় ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্টদূত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমি ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেই গিয়েছি। কিন্তু অনুষ্ঠানে কে গীতা পাঠ করবেন সেটাতো আমি জানতে চাইনি। তবে যারা আয়োজক তারাও আমাকে জানাননি। এছাড়াও প্রকাশ নাম যদি তার মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হতো তাহলে সেটা ভিন্ন। তাকে মঞ্চে ডাকা হয় কৌশিক নামে। তিনি গীতা পাঠ করেছেন। এই অন্ষ্ঠুানে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গীতা পাঠ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটা যারা জানবেন তাদের মধ্যে হয়তো ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে, তবে তাদের জন্য আমি বলতে চাই, তার প্রকৃত পরিচয় আমি জানতাম না। গণমাধ্যমে যখন এই ব্যাপারে খবর বের হয় তখন তার ব্যাপারে এটা আমি জানতে পারি। তিনি একজন সন্ত্রাসী। এছাড়াও এই নামের একজন সন্ত্রাসী বাংলাদেশ থেকে এসে ফ্রান্সে নাম পরিবর্তন করে আছেন এটাও আমার জানা নেই। এছাড়াও পুলিশের তরফ থেকে ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকেও এই নামের কোনো আসামিকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আমাকে কিছু বলা হয়নি। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আমাকে এটাও বলেছেন, ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রীর ইউনেস্কোর অনুষ্ঠানে নাকি সে গীতা পাঠ করেছিল। এটা আমার শোনা কথা। কিন্তু আমি নিশ্চত না।
তিনি বলেন, তাকে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে দেশ থেকে ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে আমাকে কিছুু বলা হয়নি। তাছাড়া রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকায় আমরা চাইলো ফ্রান্স সরকার ফেরত দিবে না। আসলে এখানে এই রকম অনেক মানুষ আছে যারা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে এই দেশে আসে এবং তারা থেকে যায়। তবে সরকার এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বললে তা অবশ্যই দেখবো। এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যা যা করণীয় সবই করা হবে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম ও পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস একই সভায় বক্তব্য রাখার পর এনিয়ে ফ্রান্সের বাংলাদেশীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, একজন পলাতক ও শীর্ষ সন্ত্রাসী সরকারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রাষ্ট্রদূত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি যদি একই মঞ্চে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে অংশ নেন, তার মাধ্যমে প্রমাণ হয় তিনি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের যে তালিকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে করা হয় সে তালিকায় প্রকাশ কুমার বিশ্বাসকে পলাতক দেখানো হয়েছে। এছাড়া প্রকাশকে ধরার জন্য ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছিল। তার বড় ভাই বিকাশ কুমার বিশ্বাস ২০১৩ সালে জামিনে মুক্তি নিয়ে দেশ ত্যাগ করে।
এব্যাপারে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রকাশ পরিচয় গোপন করে ও নাম পরিবর্তন করে এখানে রয়েছে। তার প্রকৃত পরিচয় আমার জানা ছিল না। এটা আগেও আমি বলেছি। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম