সিইটিপি সম্পূর্ণ চালু হয়নি হাজারীবাগেই যাবে কুরবানির চামড়া
হাসান আরিফ: শিল্পমন্ত্রীর হুমকি-ধামকি পর্যন্তই সার। এবারও হাজারীবাগেই যাবে কুরবানির পশুর চামড়া। সাভারে চামড়া সংগ্রহের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে না ওঠা, কমন ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি) সম্পূর্ণরূপে চালু না হওয়া, সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি) এবং ড্রাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ না হওয়াই এর প্রধান কারণ।
ঢাকার ট্যানারিগুলোকে ২৮ দফা সময় দিয়েও সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে পাঠাতে পারেনি সরকার। এমনকি মন্ত্রীর শেষ নির্দেশও মানেননি ট্যানারি মালিকরা। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে চাপে পড়েছেন তারা। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হচ্ছে তাদের।
সিইটিপি নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার কোম্পানি চীন-বাংলাদেশের যৌথ কোম্পানি জিয়াংসু লিংঝি এনভায়রনমেন্টাল ট্রিটমেন্ট কোম্পানি ও ডেভেলপমেন্ট কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে বারবার সময় দেওয়ায় এ নির্মাণকাজে অনেকটা বিলম্ব হয়েছে। সর্বশেষ তারা সাভার চামড়াশিল্প নগরীতে সিইটিপি নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ করতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে। এখনও এসপিজিএস, এসটিপি এবং ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপনের কাজ শেষ হয়নি। আর সিইটিপি ৪টি মডিউলের মধ্যে ২টি মডিউলের কাজ গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক)। প্রতিষ্ঠানটি একেক সময়ে একেক অজুহাত দিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ৫ বার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তারা আবারও আবেদন করেছে। এছাড়া মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে দীর্ঘদিন ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ছিল। এ কারণেও যথাসময়ে প্রকল্পের প্রয়োজনীয় মেশিনারি ও ইক্যুপমেন্ট আমদানির এলসি করা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, আগস্টের মধ্যে সিইটিপি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার কথাছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। ফলে আসন্ন কুরবানি ঈদে পশু জবাইয়ের চামড়া অন্যান্যবারের মতো হাজারীবাগেই প্রসেসিং করা হবে। কারণ এখন পর্যন্ত সাভারে যে কয়েকটি কারখানা স্থানান্তর করা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও চামড়া প্রসেসিং করা সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠানের ভুলের কারণে সিইটিপি প্লান্টের জন্য যেসব মেশিনারি, যন্ত্রাংশ আনার জন্য এলসি করা হয়েছিল তা বন্দরে পৌঁছতে দেরি হয়েছে। তারা শিপমেন্ট কুইক ভেসেলে না পাঠিয়ে সেøা ভেসেলে পাঠিয়েছে। এজন্য চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়তে প্রায় ৪২ দিন সময় লেগেছে। সবেমাত্র শিপমেন্ট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। আগামী রোববার নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তা খালাস করা সম্ভব হবে। এরপর দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হবে।
ট্যানারি মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ঈদের চামড়া সংগ্রহ হবে হাজারীবাগেই। কারণ, গুটিকয়েক ট্যানারি ঈদের আগে সাভারে উৎপাদনে গেলেও চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি সেখানে। চামড়া সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতিও নেই। এ অবস্থায় এবারো সারাদেশ থেকে কুরবানির চামড়ার গন্তব্য হবে পোস্তা হয়ে হাজারীবাগের দিকেই। তবে হাজারীবাগে চামড়াশিল্পের জন্য এটিই হবে শেষ ঈদ।
এ বিষয়ে শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া এনডিসি বলেন, এবারের কুরবানি ঈদের পশুর চামড়া যে করেই হোক হাজারীবাগে নিতে দেওয়া হবে না। সাভারে অবকাঠামো না থাকলে টিনশেড করে চামড়া রাখার ব্যবস্থা করা হবে। আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এ বিষয়ে একটি ঘোষণা দেবেন বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে একটি ট্যানারি সেখানে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। ঈদের আগে সাভারে ২০ থেকে ৩০টি ট্যানারির কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করেন তিনি। বাকিগুলো কোথায় করবে এমন প্রশ্নে শিল্পসচিব বলেন, আমাকে দিয়ে বলাতে চাচ্ছেন বাকিগুলো হাজারীবাগেই হবে। কিন্তু আমি সেটি বলব না। এটি আপনারা বুঝে নেন।
এদিকে, যে কোম্পানিটি সাভারে কার্যক্রম শুরু করেছে, তারা বিপাকে পড়েছে। এসপিজিএস না থাকায় চামড়ার সলিট ওয়েস্টেজ (কান-লেজ) ইত্যাদি বর্জ্য ফেলা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আমরা আপাতত প্রকল্প এলাকায় গভীর গর্ত করে বালিচাপা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করব। সম্পাদনা: মোরশেদ