কী বলেছে শাস্ত্র যন্ত্রণাদায়ক নাকি শান্তিপূণর্, কেমন হবে আপনার মৃত্যু
ডেস্ক রির্পোট : নিজের মৃত্যুর দৃশ্য কল্পনা করেন না, এমন মানুষ কি পৃথিবীতে রয়েছেন? মৃত্যুভয় আমাদের তাড়া করতে পারে, কিন্তু মৃত্যুচিন্তা থেকে আমাদের কোনো ছুটি উপায় কি? এই প্রশ্নগুলো মনের ভিতরে পাক খায় সকলেরই।
কেমন সেই চরম মুহূর্ত?
মানব জীবনে মৃত্যুই অন্তিমতম সত্য। ভারতীয় দর্শনে বলা হয়েছে, মৃত্যু আর যাই হোক, কোনো প্রাপণীয় বিষয় নয়। তবু মৃত্যুর অনিবার্যতাকে অস্বীকার করা যায় না। পেতে ইচ্ছে না করলেও গ্রহণ করতেই হবে মৃত্যুকে। এটাই বাস্তবতা। মৃত্যুর কাছে উচ্চ-নিচ, ধনী-দরিদ্র, স্ত্রী-পুরুষ ভেদ নেই। তার একটাই চরিত্রÑ সে অমোঘ, অনিবার্য।
নিজের মৃত্যুর দৃশ্য কল্পনা করেন না, এমন মানুষ কি পৃথিবীতে রয়েছেন? মৃত্যুভয় আমাদের তাড়া করতে পারে, কিন্তু মৃত্যুচিন্তা থেকে আমাদের কোনো ছুটি কি রয়েছে? এই প্রশ্নগুলো মনের ভিতরে পাক খায় সকলেরই। সেই সঙ্গে এটাও কি ঘুরপাক খায় না, কেমন হবে আমাদের মৃত্যুর ক্ষণ? এই বিন্দুতেই আলোকপাত করেছে অতি প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র ‘গরুড় পুরাণ’। এই পুরাণ-মতে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ জানিয়েছেন, কোন পরিস্থিতিতে কেমন চরিত্রের মানুষের মৃত্যু হয়।
দেখা যাক, কী বলেছেন শ্রীকৃষ্ণ।
১. সহজ, আনন্দময় মৃত্যু অপেক্ষা করছে তাদের জন্য, যারা আজীবন সত্যবাদী থেকেছেন, নিজেদের ভগবৎপদে স্থির রেখেছেন। ২. ছলনাময়, উদ্ধত মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে যন্ত্রণাময় মৃত্যু। ৩. যে ব্যক্তি নরহত্যা, নারীধর্ষণ ইত্যাদি দুষ্কর্ম করেছেন, তার জন্য অপেক্ষা করছে দারুণ যন্ত্রণাময় মৃত্যু। ৪. ‘যন্ত্রণাময় মৃত্যু’র বিবরণ রেখেছে ‘গরুড় পুরাণ’।
তার মতে, এমন মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রথমে বাকরোধ হবে, তারপরে চেতনার অর্ধলোপ ঘটবে, হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে পড়বে, তারপরে গভীর যন্ত্রণার মাধ্যমে মৃত্যু ঘটবে। এর পাশাপাশি ‘শিব পুরাণ’ও জানাচ্ছে মৃত্যুর ক্ষণ সম্পর্কে। সেই গ্রন্থ অনুযায়ীÑ
১. মৃত্যুর আগে ব্যক্তির দেহবর্ণে পরিবর্তন আসবে। দেহে পীতভাব দেখা দেবে। তার মধ্যে লোহিত বর্ণের ছোপ পড়বে। ২. ক্রমে মৃত্যুপথযাত্রীর ঘ্রাণেন্দ্রিয় ও স্পর্শেন্দ্রিয় অকেজো হয়ে পড়বে। তাপমাত্রা অনুভবে বাধা আসবে। ৩. মৃত্যুর আগে নাকি বর্ণবোধও লোপ পাবে। সবকিছু সাদা-কালোয় দেখা দিবে। ৪. মৃত্যুপথযাত্রীর চারপাশে নীল বর্ণের মাছি দেখা দেবে।
মৃত্যুকে সহনীয় করে তুলতে বেশকিছু নির্দেশ দিয়েছে ‘শ্রীমদ্ভাগবৎগীতা’। সেই গ্রন্থের মতেÑ
১. মৃত্যুলক্ষণ অনুভব করলে ব্যক্তির উচিত কথা কমিয়ে দেওয়া, ঈশ্বরচিন্তায় নিজেকে সমর্পণ করা। ২. মৃত্যু নিকটবর্তী বোধ হলে সৎকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করা উচিত। ৩. মৃত্যুর আগে ও মৃত্যুর মুহূর্তে প্রিয়জনের সান্নিধ্য পরিস্থিতি সহনীয় করে তোলে।
৪. মৃত্যু আসন্ন জেনে কেউ যদি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে চান। তাহলে যন্ত্রণা বাড়বে। বরং এমন ক্ষেত্রে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৫. মৃত্যুর মুহূর্তে বাবা-মায়ের নাম স্মরণে রাখাটা প্রয়োজন, এতে মৃত্যু নাকি সহনীয় হয়। সেই সঙ্গে প্রয়োজন নিজের জীবনের ভ্রমগুলোকে স্মরণ করে ক্ষমা চাওয়া। সর্বোপরি প্রয়োজন ইষ্টনাম।