
ব্রহ্মচর্য ব্রত
ডেস্ক রির্পোট : নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচর্য্য ব্রত বার বৎসর, তিন বৎসর, বা এক বৎসরের জন্যও নেওয়া যায়। এখন তোমাকে এক বৎসরের জন্যই এই ব্রত দিচ্ছি। যদি নিয়ম রক্ষা করে ঠিকমতো এই এক বৎসর চলতে পার, তবে আবার দেওয়া যাবে। নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচর্য্যরে নিষ্ঠাই মূল। নিষ্ঠাটি খুব চাই। নিজের নিষ্ঠা কোনো অবস্থায়ই ত্যাগ করবে না। যে সব নিয়ম বলে দিচ্ছি, নিষ্ঠার সহিত সেসব নিয়ম রক্ষা করে চলবে।
প্রতিদিন ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে সাধন করবে। পরে প্রাতঃক্রিয়া সমাপন করে শুচি শুদ্ধ হয়ে আসনে বসবে। গায়ত্রী জপ করবে। তারপর গীতা অন্ততঃ এক অধ্যায় করে পাঠ করবে। পাঠ শেষ করে আবার সাধন করবে। স্নানান্তে গায়ত্রী জপ করে তর্পণাদি করবে। ২. স্বপাক আহার করবে, অথবা ভালো ব্রাহ্মণের রান্না অন্নও আহার করতে পার। আহারে কোনো প্রকার অনাচার না হয়। আহারের একটা নিয়ম রাখবে। পরিমিত আহার করবে, খুব বেশি বা কম না হয়, যাতে কামভাব উত্তেজিত হয় এমন বস্তু খাবে না। অধিক পরিমাণ ঝাল, অম্ল ও মিষ্টি ত্যাগ করবে। মধু ও ঘৃতে উত্তেজনার বৃদ্ধি হয়; এসব বস্তুও অধিক খাবে না। আহারসম্বন্ধে সর্বদাই খুব সাবধানে থাকবে। আহারটি বেশ শুদ্ধমতো করবে। ৩. আহারান্তে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম করবে। পরে ভাগবত, মহাভারত, রামায়নাদি কিছু সময় পাঠ করবে। পাঠের পর নির্জনে বসে ধ্যান করবে। বিকাল বেলায় ইচ্ছা হলে একটু বেড়াতে পার। ৪. সন্ধ্যার সময়ে গায়ত্রী জপ করবে। পরে সাধনাদি যেমন করে থাক তেমনই করবে। খুব ক্ষুধা বোধ হলে সামান্য কিছু জলযোগ করবে। অন্নাহার দুবেলা করবে না। ৫. নিতান্ত সাধারণ বসন পরবে। সামান্য শয্যায় শয়ন করবে। দিনের বেলায় নিদ্রা ত্যাগ করবে। সময়ে সময়ে সাধুসঙ্গ করবে, সাধুদের উপদেশ শ্রদ্ধার সহিত শুনবে। নিজের সাধনে বিশেষরূপে নিষ্ঠা রাখবে। ৬. কাহারও নিন্দা করবে না; কাহারও নিন্দা শুনবে না; যে স্থানে নিন্দা হয় সে স্থান ততক্ষণাৎ ত্যাগ করবে। ৭. কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক ভাব রাখবে না। যিনি যেভাবে সাধন করেন তাকে সেভাবেই সাধন করতে উৎসাহ দিবে। ৮. কাহারও মনে কষ্ট দিবে না; সকলকেই সন্তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করবে। অন্যের সেবা তোমার দ্বারা যতদূর সম্ভব হয়, করবে। মানুষ্য, পশু, পক্ষী, বৃক্ষলতা প্রভৃতির যথাসাধ্য, সেবা করবে। নিজেকে অন্যের নিকটে ছোট মনে করবে। সকলকে মর্যাদা দিবে। প্রতি কাজই বিচার করে করবে। সর্বদা প্রতি কাজে বিচার করে চললে কোনো বিঘœ হয় না। ৯. সর্বদা সত্য বাক্য বলবে; সত্য ব্যবহার করবে। অসত্য কল্পনা মনেও আসতে দিবে না। কথা কম বলবে। ১০. যুবতী স্ত্রীলোক স্পর্শ করবে না। দেবদর্শনে, গোলমালে, রাস্তায় ঘাটে বা অজ্ঞাতসারে স্পর্শ হলে তাহা স্পর্শমধ্যে গণ্য হবে না। অতি গোপনে নিজের কাজ করে যাবে। ১১. সর্বদাই খুব শুচি শুদ্ধ হয়ে থাকবে। পবিত্র স্থানে পবিত্র আসনে বসবে।
এ সমস্ত নিয়ম রক্ষা করে চলতে পারলে আগামী বৎসর আরও নিয়ম বলে দেওয়া যাবে। এই সব নিয়ম উপদেশ করিয়া ঠাকুর আমার দিকে চাইয়া খুব প্রাণায়াম করিতে লাগিলেন। আমাকেও সঙ্গে সঙ্গে প্রাণায়াম করিতে বলিলেন, আমিও করিতে লাগিলাম। পরে দুর্লভ ব্রহ্মচর্য্য ব্রতে আমায় দীক্ষা দিলেন। এ সময়ে আনন্দে আমার নৃত্য করিতে ইচ্ছা হইল। ভাবে অভিভূত হইয়া কতক্ষণ বসিয়া রহিলোাম। পরে ঠাকুর আমাকে উঠিতে বলিলেন। আমি যেমনি ঠাকুরের ঘর হইতে বাহির হইলাম, অমনি সকলে কুঞ্জে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। আমার ব্রতের বিষয়ে কেহই কিছু জানিতে পারিলেন না।
বিচারপূর্বক দানের উপদেশ বিকালে সকলে ঠাকুরের সঙ্গে শ্রীশ্রীগোবিন্দজী দর্শনে বাহির হইলাম। মন্দিরের নিকটে একটি বৃদ্ধকে দেখিয়া ঠাকুর দাঁড়াইলেন। বৃদ্ধ জ্বরাতুর, কাঙ্গালবেশ। ঠাকুরের সম্মুখে আসিয়া, মনোগত ভাব ব্যক্ত করিতে লাগিলেন। আমরা তাহার ইঙ্গিতে কিছুই বুঝিলাম না। এ সময়ে আমি ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘বৃদ্ধ কি বলছে?’ ঠাকুর বলিলেন, ‘তোমার গায়ের কম্বলখানা চায়।’ আমি বলিলাম, ‘দিয়া দিব নাকি?’ ঠাকুর বলিলেন, ‘তোমার ইচ্ছা হলে দিতে পার।
