দশ হাজার শিক্ষার্থীর সংহতি কাল ও সোমবার জবি শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট
মীর রওশন আলম, জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের হলের দাবিতে নেওয়া কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন দেশের ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বুদ্ধিজীবী, লেখক, বিচারপতি ও সাংবাদিকরা।
গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থীর সমাগম ঘটে। এদিকে আগামীকাল রোববার ও সোমবার ফের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিকাল ৩টার দিকে শহিদ মিনার চত্বরে জড়ো হতে থাকেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। হলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে মিছিল করেন। শিক্ষার্থীর মিছিলে মুখর হয়ে যায় শহিদ মিনার চত্বর। জবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক), নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ), সিটি ইউনিভার্সিটি এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সংহতি সমাবেশে একাত্মতা পোষণ করেন।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাত্মতা পোষণ করে মাহফুজুর রহমান বলেন, ঢাবির শিক্ষার্থীদের যেমন হলে থাকার অধিকার আছে, জবি শিক্ষার্থীদেরও তেমনি হলে থাকার অধিকার আছে।
সংহতি সমাবেশে একাত্মতা পোষণ করে ব্যারিস্টার দেবব্রত চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ৬ কোটি টাকা মেস ভাড়া দিচ্ছেন। গত ১১ বছরে ৭০ কোটি টাকার বেশি তারা বাড়ির মালিকদের দিয়েছেন। প্রতিবছর ৪ কোটি টাকা উন্নয়ন ফি দিচ্ছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কোনো সুবিধা দিচ্ছে না। জবির শিক্ষার্থীরা কেরানীগঞ্জে কেন যাবেÑ প্রশ্ন করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগারে জবি শিক্ষার্থীদের হলের দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক। এ আন্দোলনকে প্রতিহত করতে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
ইমরান এইচ সরকার বলেন, সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের জবির হল আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো উচিত এবং দ্রুত শিক্ষার্থীদের হলের দাবি সরকারের মেনে নেওয়া উচিত।
ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও নটরডেম কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. রাশেদা বলেন, শিক্ষার্থীরা আজ গুলি থাচ্ছে, আহত হচ্ছেÑ এর দায় কে নেবে? যে ব্যক্তি দাবি আদায়ের জন্য ছাত্রত্ব হারিয়েছেন, জেল খেটেছেন সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা আজ দেশসেবায় নিয়জিত আছেন। তার উচিত জবি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করে দেওয়া।
গত ২২ আগস্ট পুলিশের হামলায় আহত জবি শিক্ষার্থী মিঠুন বলেন, আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, এটা কি আমার দোষ। আমাকে কেন গুলি খেতে হলো। আপনারা আমার রক্ত বৃথা যেতে দেবেন? এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, মমতাময়ী মা, আপনি কি দেখছেন না আমরা আজ গুলি খাচ্ছি, আহত হচ্ছি? জবি শিক্ষার্থী মহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
রোববার ও সোমবার ছাত্র ধর্মঘট: হলের দাবিতে আগামী রোববার ও সোমবার ছাত্র ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছেন জবি শিক্ষার্থীরা। সংহতি সমাবেশ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জবি শিক্ষার্থীদের পক্ষে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট ঘোষণা না এলে রোববার ও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। কোনো প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে না। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে হলের দাবি জানাবেন। রায়সাহেব বাজার এবং তাঁতিবাজারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। এ দুদিনের মধ্যে কোনো ঘোষণা না এলে মঙ্গলবার থেকে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। সম্পাদনা: মোরশেদ