বিএনপি ও ৬ দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়া জাতীয় স্বার্থে সুন্দরবন রক্ষা সবার নৈতিক দায়িত্ব
রফিক আহমেদ: বিএনপি ও ৬ দলের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে সুন্দরবন রক্ষা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। রক্ষা করতে না পারলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন দলের নেতারা বিবৃতি ও বক্তব্যের মাধ্যমে এ কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে সুন্দরবন রক্ষা করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।
এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) একটি দুর্নীতিপরায়ণ কোম্পানি। রামপালে যে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে, এনটিপিসি তা নিজেদের দেশেই বাস্তবায়ন করতে পারত। কিন্তু দুর্নীতির কারণে তারা সেখানে করতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ সচেতন হলে এদেশেও তাদের স্থান হতো না। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সুন্দরবন ঘিরে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্লট ক্রয় ও বরাদ্দ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বিশে^র সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে যে প্রকল্প ভারত নির্মাণ করতে দেয়নি, সেখানে ক্ষমতার স্বার্থে তাদের খুশি করার জন্য বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের মাত্র কয়েক মাইলের মধ্যে এ প্রকল্প নির্মাণের অনুমতি সরকারের পক্ষেই সমীচীন নয়। অথচ, এর বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে সরকার তাদের শুধু বাধাই দিচ্ছে না, লাঠিপেটা ও গ্রেফতার করছে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, সরকারের পক্ষে সুন্দরবন ক্ষতি না হওয়ার নানা জটিল ও উচ্চমার্গের কৌশলের কথা দেশবাসীকে শোনানো হচ্ছে- সুপার ক্রিটিক্যাল, আল্টা সুপার ক্রিটিক্যাল আরও অনেক কিছু। কিন্তু আমরা দেখছি, দূরের গহীন সুন্দরবন রক্ষার কেরামতি কল্পকাহিনী কতটা বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সুন্দরবনবিনাশী রামপালচুক্তি বাতিল ও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। কোনো দেশপ্রেমিক সরকার কেবল অন্য রাষ্ট্রকে খুশি করার জন্য এ ধরনের আত্মঘাতী পদক্ষেপ নিতে পারে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, সরকার জনমত ও পরিবেশবিদদের আপত্তির পরও সুন্দরবন ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এতে সুন্দরবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে।
তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে সুন্দরবন ধ্বংস করতে চায়। তিনি বলেন, মিথ্যাচার, প্রতারণা, দমন-পীড়ন, দুনীতি ও আইন ভঙ্গ করে জাতীয় স্বার্থবিরোধী রামপাল প্রকল্পের কাজ চলছে, চলছে ভূমি ও বনগ্রাসী তৎপরতা। তিনি সুন্দরবন রক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন ও ক্ষতিকর স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানান।
রামপাল প্রশ্নে ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে বলা হয়, সুন্দরবনসহ দেশের তেল-গ্যাস জাতীয় সম্পদ রক্ষার জন্য তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও দেশের অধিকংশ রাজনৈতিক দল আন্দোলন করছে। সুন্দরবন বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। এর কাছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে তার প্রতিক্রিয়ায় কেবল সুন্দরবনের পরিবেশে ব্যাপক ক্ষতি হবে না, এর সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় যে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে তাতে সুন্দরবনের আরও বড় ক্ষতি সাধন হবে। সম্পাদনা: মোরশেদ