মির্জা ফখরুলের কান্না নিয়ে যত সমালোচনা
রিকু আমির : একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্না নিয়ে কড়া সমালোচনা চলছে। শুধু আওয়ামী লীগের নেতারাই এ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন।
২৫ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, স্বাধীনতার পর ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল। কিন্তু বিএনপি মাত্র সাত বছরেই অস্থির হয়ে উঠেছে। তাদের কর্মীরা চুরি-ডাকাতি করে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাচ্ছে। আর তাদের দলের নেতারা মায়াকান্না করছেন। ডাকাতদের জন্য মায়াকান্না করে মির্জা ফখরুল ইসলাম দেশ ও বিশ্ববাসীকে কী বুঝাতে চাইছেন? ফরিদপুরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
গত ২৩ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘৩০টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল’ বন্ধের প্রতিবাদ জানাতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (অ্যাব) আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি তার বক্তব্যের একটি অংশে বলেছিলেন, ‘সিগন্যালে থামে গাড়ি, হকার ছেলেপেলে, ইয়াং ছেলেপেলে সব আসে। দেখে বলে যে, স্যার আমি বিএনপি করতাম লক্ষ্মীপুরে। এত মামলা, পালিয়ে চলে এসেছি। এখন হকারি করছি। রিকশা চালায় আমাদের ছেলেপেলে।’ এরপরই গলা ধরে আসে মির্জা ফখরুলের। একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
২৫ আগস্ট রাজধানীর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি তো কান্নার দল নয়; তারা জাতিকে বারবার কাঁদিয়েছে। হত্যাকারীদের চোখে অশ্রু মানায় না।
শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে হানিফ বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে এ জাতিকে কাঁদিয়েছিল দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। শেখ হাসিনার ওপর ১৯ বার হামলা করেছে তারা। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেডহামলা করে দেশের মানুষকে আবারও কাঁদায় দলটি।
২৪ আগস্ট জাতীয় হৃদরোগ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এখন কাঁদেন কেন? ২১ আগস্ট গ্রেনেডহামলা করে যখন নিরপরাধ মানুষকে রক্তাক্ত করেছেন, এমনকি ঘটনার তদন্তও করতে দেননি, তখন কি কান্না পায়নি আপনার? জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন, কত পরিবার ধ্বংস করেছেন, তখন কি আপনার কান্না পায়নি?
একইদিন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে সন্ত্রাসবিরোধী আলোচনায় ‘একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে না পেরেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কান্না করছেন’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, একাত্তরের ঘাতকদের পৃষ্ঠপোষকতা, রাজনীতিতে পুনর্বাসন, মন্ত্রী বানানো, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা, ২০০১ পরবর্তী নির্যাতন, ভয়াবহ গ্রেনেডহামলা ও সাম্প্রতিক আগুনসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের জন্য জাতির কাছে মাফ না চাইলে মির্জা ফখরুলদের এ কান্না থামবে না।
২৪ আগস্ট খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কেঁদেছেন। তার জন্য মায়া হয়, দুঃখ হয়।
রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির মহড়াকক্ষে ২১ আগস্ট গ্রেনেডহামলায় নিহত আইভি রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘বেগম আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটি’ সভাটির আয়োজন করে।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের কান্না দেখেছি। সেটা দেখে আমার দুঃখ লেগেছে। আপনি এমন একটা পাপিষ্ঠ দলের দায়িত্ব নিয়েছেন, যারা রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস করে। যারা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত। এই পাপিষ্ঠদের দায়িত্ব আপনি গ্রহণ করেছেন।
একইদিন বিকালে বিআইডব্লিইটিসি ভবনে বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন আয়োজিত জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন মন্ত্রী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্নার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ফখরুল সাহেব এখন কান্না করেন কেন? দীর্ঘ এক যুগ পরে বুঝলে কী হবে? আগেই আপনাদের বোঝা উচিত ছিল। কিন্তু আপনারা যখন নৃশংসভাবে ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছেন, তার সদুত্তর কে দেবে? যতই কান্নাকাটি করেন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে সব খুনির বিচার হবে। সম্পাদনা: মোরশেদ