ফারুক আলম : শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পঞ্চম দিন আজ। এরফলে অচল নৌপথ। যাত্রীবাহী লঞ্চের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে পণ্য পরিবহন। যাত্রী ভোগান্তির পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ সমস্যা সমাধানে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে শ্রম অধিদফতরের পরিচালক এস এম আশরাফুজ্জামান গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করলেও ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এজন্য আজ শনিবার মালিক, শ্রমিক ও শ্রম অধিদফতর একত্রে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। নৌ ধর্মঘটে দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ ও শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি লঞ্চ সার্ভিস চালু রয়েছে।
তবে শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট উপেক্ষা করে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঞ্চ মালিকরা। বরিশাল-ভোলা ও বরিশাল-বরগুনা রুটে এসব লঞ্চ চলাচল করবে। প্রতি এক ঘণ্টা পর পর এই দুই রুটে লঞ্চ চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন মালিকরা। মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তের পর গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে সুরভী নামে একটি লঞ্চ বরিশাল নদীবন্দর থেকে ভোলার ভেদুরিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পরে বিকাল চারটায় গ্রীন ওয়াটার-৫ নামে আরও একটি লঞ্চ ভেদুরিয়ার উদ্দেশ্যে ঘাট ছাড়ে।
সদরঘাট থেকে পর্যাপ্তসংখ্যক লঞ্চ না ছাড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা টার্মিনালের পন্টুনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে চলে যান। চাঁদপুরগামী আবদুল মান্নান বলেন, সকাল সাড়ে আটটায় টার্মিনালে এসেছি। চাঁদপুরের মতলব যাব। পরিবার-পরিজন নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে টার্মিনালে বসে আছি। কিন্তু লঞ্চ পাচ্ছি না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নৌ ধর্মঘটের কারণে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের উঠানামাও বন্ধ রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে ব্যবসায়ীদের পথে নামতে হবে। যত দ্রুত শ্রমিকদের ধর্মঘটের সমাধান করা যায়, ততই ব্যবসায়ীদের জন্য মঙ্গল।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারি পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। কিন্তু এখনো কোনো সমাধান হয়নি। ফলে প্রতিদিন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও মংলা আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মাস্টার জানান, শ্রমিকদের ১৫ দফা দাবি আদায়ের জন্য চলতি বছর এ নিয়ে তিনবার ধর্মঘট করেছেন নৌ শ্রমিকরা। প্রতিবারই মালিক পক্ষ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করিয়ে নেন। কিন্তু এবার দাবি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
চলমান ধর্মঘটের ব্যাপারে সরকারি পর্যায়ে মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে তিনি জানান। সম্পাদনা: মোরশেদ