আলোচনায় নেই ‘খেতাবপ্রাপ্ত’ সন্ত্রাসীরা
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া অবস্থানের কারণে প্রায় হারিয়ে গেছে খেতাবপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা। এখন আর শোনা যায় না কালা জাহাঙ্গীর, মুরগি মিলন, কিলার আব্বাস, ডাকাত শহীদ বা সুইডেন আসলামের নাম।
আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুর্র্ধষ এসব সন্ত্রাসী পরিচিত ছিল উদ্ভট ও অদ্ভূত নামের খেতাবে। এদের পরিচিতি র্যাব, পুলিশ, ডিবি, এসবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেকর্ডেও লিপিবদ্ধ রয়েছে। এসব সন্ত্রাসীর কেউ খুন হয়েছে, কেউ আছে কারাগারে, আবার কেউ আত্মগোপন করে আছে বিদেশে, কেউ কেউ এখনো আন্ডারওয়ার্ল্ড দাবড়ে বেড়াচ্ছে। সন্ত্রাসীদের এ ধরনের নাম শুনে কেউ হাসি-ঠাট্টা, তামাশা-কৌতুক রসিকতায় মত্ত হন আবার কেউ ভয়ে হন অস্থির।
হ্যান্ডকাপ পরিহিত অবস্থায় কুষ্টিয়ায় লাশ পাওয়া রাজধানীর ৫৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজুমদারের আন্ডারওয়ার্ল্ডে আরেক নাম ছিল কালা রফিক। শরীরের রং কালা বলে তাকে কালা রফিক নামে ডাকা হতো। কেরানীগঞ্জ থেকে অপহরণের পর উদ্ধারকৃত ছয় বছরের শিশু স্কুলছাত্র পরাগ ম-লের অপহরণকারীদের অন্যতম আমীর আলী ওরফে ল্যাংড়া আমীর। গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজত থেকে পালানোর সময় তার পায়ে পুলিশের গুলি বিদ্ধ হওয়ার পর ল্যাংড়া হয়ে হাঁটত বলে তার নামের আগে পরিচিতি পেয়েছে ল্যাংড়া আমির।
রাজধানীর এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম হচ্ছে মুরগি মিলন। এক সময় মুরগি বিক্রি করত বলে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার নাম হয় মুরগি মিলন। কালা রফিকের মতোই আরও নাম আছে কালা জাহাঙ্গীর, কালা ফারুক। কালা জাহাঙ্গীর ছিল পুরষ্কার ঘোষিত দুর্র্ধর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার গায়ের রং কালো ছিল বলে তাকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে কালা জাহাঙ্গীর নামে ডাকা হতো।
আরেক সন্ত্রাসীর নাম হচ্ছে কালা ফারুক। সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে বিদেশে যাওয়ার সময় প্লেন থেকে নামিয়ে আনার পর অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় সে। লালবাগের এক সন্ত্রাসীর নাম নাটকা বাবু।
আমেরিকায় আত্মগোপনরত এক সন্ত্রাসীর নাম টোকাই সাগর। আসল নাম গোলাম রসুল সাগর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টোকাই ছিল। আন্ডারওয়ার্ল্ডে এসে তার নাম হয় টোকাই সাগর। তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করার পর সে আমেরিকায় চলে যায়। আরেক সন্ত্রাসীর নাম কিলার আব্বাস। তার আসল নাম আব্বাসউদ্দিন। পেশাদার কিলার হওয়ায় তার নামের আগে কিলার যোগ হয়। দুই সন্ত্রাসীর নাম পিচ্চি হান্নান, পিচ্চি হেলাল। তাদের দেহের আকৃতি বেটে। পিচ্চি হান্নান ক্রসফায়ারে মারা গেছে। পিচ্চি হেলাল কারাবন্দি।
ভিপি হেলালের আসল নাম হেলাল উদ্দিন চৌধুরী। এক সময় কলেজের ভিপি ছিল। তাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার নামের আগে যুক্ত হয়েছে ভিপি হেলাল।
রাজধানীর আরেক সন্ত্রাসীর নাম বিহারী মুন্না। মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্পে জন্ম নেওয়ার কারণে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তাকে ডাকা হতো বিহারী মুন্না নামে। বিহারী মুন্নার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারও কাছ থেকে কিছুই জানা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল ক্যাডার শিশিরকে ডাকা হতো ডগ শিশির নামে। কাঁটাবনে এক দোকানে চাঁদা না পেয়ে দোকানির কুকুর নিয়ে আসার কারণে তাকে ডগ শিশির নামে ডাকা হতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের করিম সরকার দাপট দেখিয়ে নীলক্ষেত এলাকায় ফাও তেহারি খেত বলে তার নাম হয়ে যায় তেহারি করিম। র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত রায়ের বাজারের বাবুর দুই চোখ ঘোলা হওয়ায় তাকে ডাকা হতো ক্যাট বাবু। ক্রসফায়ারে নিহত পুরান ঢাকার শহীদ ডাকাত দলের সর্দার ছিল বলে তার নামের পরিচিতি হয় ডাকাত শহীদ।
ঢাকাই আকবর, কানা শফিক, ঠোঁট উচা বাবু, মাছ কাদের, বিডিআর সেলিম, মেজর ইকবাল, বোমা মতিন, চাউল পিন্টু, গরু শফিক, ভোতা রানা, লাদেন মামুন, বোতল আক্কাছ, হোঁকড়া বাবু, পাঁঠা সাত্তার, ভাংরী খোকন, ফাউল সোহেল, সাদা সেন্টু, মামা খোকন, ব্যাঙ্গা বাবু ইত্যাদি কত যে নাম ছিল আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। শরীরের গড়নের আকৃতিতে, কর্ম দোষ বা গুণে, সহজে চেনার সুবিধার্থে, মা-বাবার দেওয়া আসল নাম আড়ালে পড়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে সন্ত্রাসীদের এমন উদ্ভট নাম হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক সন্ত্রাসী আরেক সন্ত্রাসীকে আসল নামের সঙ্গে উদ্ভট খেতাব দিয়ে ডাকে বলে তারা এ ধরনের পরিচিতি পেয়েছে। তাই পুলিশের খাতায়ও সন্ত্রাসীদের ওই নামগুলোই লিপিবদ্ধ হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্সদের কাছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের খেতাবি নামের পরিচিতি বেশি। পুলিশ সোর্সদের কাছে নাম জিজ্ঞেস করলেই তারা আসল নামের সঙ্গে খেতাবি নামটি যুক্ত করে দেয়। এভাবেই পুলিশের রেকর্ডে সন্ত্রাসীদের নামের উদ্ভট পরিচিতি যুক্ত হয়েছে। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি