আব্দুম মনিব, কুষ্টিয়া ও শরীয়তপুর প্রতিনিধি : ভারত ফারাক্কা বাঁধের দরজা খুলে দেয়ায় পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকায় পানি বিপদসীমা ছুইছুই। প্রতি তিন ঘণ্টায় ২ সে.মি. করে পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার গতি অব্যাহত থাকলে আজ শনিবারের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রিম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এদিকে হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বাড়ায় দৌলতপুর উপজেলা চিলমারি ও রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমূল হক বলেন, যে গতিতে পানি বাড়ছে, এতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। তিনি বলেন, ভারতের বিহার রাজ্যে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীতে পানির বিপদসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ সে.মি.। সেখানে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ০৬ সে.মি.। পানি বিপদসীমা থেকে মাত্র পয়েন্ট ১৯ সে.মি. দূরে। পাউবোর পানি পরিমাপ কাজে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি তিন ঘণ্টায় ২ সে.মি. করে পানি বাড়ছে। ১৮ আগস্ট পদ্মায় পানির মাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩২ সে.মি.। ১৯ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৪০ সে.মি.। ২৫ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সে.মি.। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদেও অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে। পাউবো বলছে, পদ্মা নদী ও গড়াই নদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও বাঁধগুলোতে নজর রাখা হচ্ছে।
দৌলতদিয়া উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, ৩/৪ দিন ধরে অব্যাহতভাবে পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের ১৮ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় এত ক্ষতি হয়নি।
বাজুমারা গ্রামের আতাউল হক বলেন, নলকূপ ডুবে যাওয়ায় পান করার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামের আরেক বাসিন্দা মান্নান বেপারি বলেন, নৌকায় করে গ্রামবাসীকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এদিকে, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর গ্রামে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীর ভাঙনে ১৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ নিয়ে গত ২০ দিনের ভাঙনে গ্রামটির প্রায় ৬০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ভাঙনকবলিত এলাকায় যান জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে গ্রামবাসীকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাদেরের ভাষ্য, সেখানকার পদ্মানদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো ভাঙছে। পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নদীর তীর থেকে মানুষদের সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, ভাঙনরোধে এই মুহূর্তে কোনো প্রকল্প তাদের কার্যালয়ে নেই। কয়েকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। সেগুলো অনুমোদন হলে বাস্তবায়ন করতে পারবেন। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা