হুমায়ুন আজাদ হত্যামামলা দুই চিকিৎসকে ঝুলে আছে বিচার
মামুন খান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদকে হত্যার ১২ বছর পার হলেও আলোচিত মামলাটির বিচার এখনো শেষ হয়নি। দুই চিকিৎসকের সাক্ষীর অভাবে বিচার শেষ করা যাচ্ছে না। জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তাদের সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ।
ওই দুই চিকিৎসক হলেন, ডা. শহিদুল ইসলাম ও ডা. মেজর শওকত হাসান। ডা. শহিদুল ইসলাম ওই সময় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। আর ডা. শওকত হাসান সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেই সময় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) কর্মরত ছিলেন। তারা দুজনই ড. হুমায়ুন আজাদের শরীরের জখমের পরীক্ষা করেন।
মামলায় ডা. শহিদুল ৩৩ নম্বর সাক্ষী এবং ডা. শওকত ৩৪ নম্বর সাক্ষী। তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ২০১৫ সালের ১৯ মে সমন জারি করেন আদালত। তারপরও তারা হাজির না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৫ জুন তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর এ পর্যন্ত তিনটি শুনানির ধার্য তারিখ অতিবাহিত হলেও তারা আদালতে সাক্ষী দিতে হাজির হননি। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারসংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিল করেনি। মামলাটি ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
মামলার নথি থেকে দেখা গেছে, মামলায় চার্জশিটভুক্ত ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক সাক্ষীসহ ৩৮ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। এখন ওই দুই চিকিৎসক সাক্ষ্য দিলেই মামলার কার্যক্রম শেষ করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘মামলাটিতে তদন্ত কর্মকর্তাসহ অধিকাংশ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এ মামলায় দুই ডাক্তার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তারা সাক্ষী দিতে হাজির না হওয়ায় মামলাটি শেষ করা যাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মামলার ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদের সাক্ষী দিতে আসতে হবে।’
মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি এবিএম বশির উদ্দিন মিয়া বলেন, মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। দুই চিকিৎসকের সাক্ষ্যগ্রহণ করে সাক্ষী ক্লোজ করা হবে। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে এবং এরপরই রায়ের তারিখ ধার্য করবেন আদালত। আশা করছি দু-এক মাসের মধ্যে মামলার বিচার শেষ হয়ে যাবে ।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলা একাডেমির উল্টোদিকে ফুটপাতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন ড. হুমায়ুন আজাদ। হামলার পর তিনি ২২ দিন ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসারত ছিলেন। কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০০৪ সালের আগস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ওই বছরের ১২ আগস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান মামলাটি তদন্তের পর ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল ৫ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। হুমায়ুন আজাদের ওপর চরমপন্থি ইসলামী জঙ্গিরা এ হামলা চালিয়েছিল বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে। প্রথমে এটি হত্যাচেষ্টা মামলা হলেও সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে এটি হত্যামামলায় পরিণত হয়।
হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়াজে বিষোদগার করা জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে আসামি করা হলেও পরে তাকে বাদ দেওয়া হয়।
মামলার আসামিরা হলেনÑ জেএমবির সুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নুর মোহাম্মদ পলাতক রয়েছেন।
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রিজনভ্যান থেকে এ মামলার ২ আসামি সালাহউদ্দিন ও রাকিবুল হাসানকে ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। পরে এদের মধ্যে রাকিবকে ওইদিন রাতেই ধরা হয় এবং পরে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয়। সম্পাদনা: আ. হাকিম