নারীরা যখন আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়ে
নূসরাত জাহান: দুবছর আগে ইরাকের সিনজার পাহাড়ের পাদদেশে থাকা কুর্দি অধ্যুষিত ইয়াজিদিগোষ্ঠীর ওপর হামলা চলায় ইসলামিক স্টেট (আইএস)। হিংস্র পশুর মতো তারা কুর্দিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কেউ তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি, এমনকি সরকারি বাহিনীও নয়। হাজার হাজার পুরুষকে হত্যা করা হয়। আর নারী ও মেয়ে শিশুদের যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি করতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে সিরিয়া ও তুরস্ক থেকে আসা কুর্দিস গেরিলাবাহিনী আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তাদের সম্পূর্ণ সহায়তা করেছে বেঁচে যাওয়া ইয়াজিদি জনগোষ্ঠী। তারা সিরিয়ায় একটি এলাকায় স্বায়ত্তশাসন জারি করেছে। ওই এলাকার নাম দিয়েছে রজাভা। গড়ে তুলেছে নিজেদের শাসন ব্যবস্থা। এ গেরিলাবাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য নারী। এসব নারী গেরিলারা জানিয়েছে, তারা মূলত অন্য নারীদের রক্ষার জন্যই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন। কারণ তারা জানে আইএস কী ধরনের অমানবিক নির্যাতন চালায় নারীদের ওপর।
এই নারীরা গেরিলা ইউনিটের কমান্ডও দেন। সিনজার পর্বতের কাছ থেকে আইএসের নির্যাতনের শিকার নারীদের উদ্ধার করে ইয়াজিদি নারীরা গেরিলাবাহিনী গড়ে তোলে। নাম দেয় ওমেন্স প্রটেকশন ইউনিট- শেনগাল।
চীন থেকে ভিয়েতনাম, কিউবা থেকে নিকারাগুয়া, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, ইরাক ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার লড়াইয়ে নারী গেরিলারা লড়েই করেছেন। এমনকি প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর নারীদের জন্য ‘ওমেনস ইন্টারন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ফর পিস অ্যান্ড ফ্রিডম’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলে। সেখানে এই সময় নারীরাই নারীদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে।
স্বায়ত্তশাসনের জন্য কুর্দিস লিবারেশন মুভমেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে। তবে নারীদের এ গেরিলাবাহিনীও কম যায় না। নারী গেরিলারাও যে সমাজের যেকোনো পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং কাজ করতে পারে সেটাই তারা প্রমাণ করেছে।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী রজাভায় নারী গেরিলাদের শাসন চলে। এটা স্বায়ত্তশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। যেখানে নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করে। তবে এখানে নারীদের অংশগ্রহণ বিশেষ করে লক্ষ্যণীয়। কারণ এ গেরিলা বাহিনীতে সেইসব নারীরাই অংশ নিয়েছেন যারা জঙ্গিদের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। এরপর তারা বারবার হাত বদলেছে। নারীরা একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বসনিয়া, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো কিংবা ভারত ও বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। আর এখন ইরাক ও সিরিয়ায় এখন নারীরা এমন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
ইয়াজিদি নারী যারা ভয়াবহ ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি এত সহজ নয়। কারণ তারা একই ধরনের সমাজে বাস করে। যেখানে নারীদের আঙুল দিয়ে তাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা দেখিয়ে দেওয়া হয়। কাজেই তাদের উদ্বুদ্ধ করে এমন একটি বাহিনীতে কাজে লাগানো সহজ নয়। তবে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া ছাড়াও ইয়াজিদি নারীদের কোনো উপায় ছিল না।
ইয়াজিদি নারীদের এ গেরিলা দল তাদের নতুন একটি পরিচয় দিয়েছে। নারীবাদীরা হয়তো ভাবতে পারেন, নারীবাদী কোনো চিন্তা বা মনোভাব থেকে এই নারীদের গেরিলাবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। আসলে তা নয়। শুধুই নারীদের বাঁচাতেই এগিয়ে এসেছে নারীরা। হাতে তুলে নিয়েছে অস্ত্র। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম