ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে অর্থ প্রদান গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থাকা অবস্থায় ড. ইউনূসের অনুদান সন্দেহজনক
বিশ্বজিৎ দত্ত: গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থাকা অবস্থায় ড. ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্রে একই নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান খোলা এবং সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়াকে ব্যাংক ও কোম্পানি আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০ লাখ ডলার অনুদানকে সন্দেহজনক লেনদেন বলেও মনে করছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ আমেরিকা প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০০৮ সালে। তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ড. ইউনূস গ্রামীণ আমেরিকা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমনকি তৎকালীন গ্রামীণ ব্যাংক পরিষদেরও অনুমোদন নেননি। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের মার্চ মাসে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা ও পরিচালক হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কোনো অর্থ নিয়েছেন কিনা, বিষয়টিও তদন্তের দরকার বলে মনে করছেন অনেকে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা এপি’র এক রিপোর্টে গ্রামীণ আমেরিকার মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ড. ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে এক থেকে আড়াই লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। যদিও এ মুখপাত্র দাবি করেছেন, এ অর্থ দেওয়া হয়েছে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ সম্মেলনে অংশগ্রহণের ফি হিসেবে। অনুদান দেওয়ার সময়ই ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
এপির রিপোর্টে বলা হয়, হিলারির সঙ্গে ড. ইউনূস দেখা করেন ২০০৯ সালে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত ইমেইলেও উল্লেখ রয়েছে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে ইউএন কনভেনশনে যোগদান করতে যান। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা মেলানি ভারবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হিলারির সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারির সঙ্গে দেখা করেননি। একই সময়ে অর্থাৎ ২০০৯ সালে হিলারির সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান ও হিলারির মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা ইঙ্গিত বহন করে, ড. ইউনূস আসলে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে অর্থ দিয়েছেন তার পক্ষে হিলারির লবিংয়ের জন্য।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ইতোমধ্যে ড. ইউনূসের ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে অর্থ দেওয়ার বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
গ্রামীণ আমেরিকার বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে আয় করেছে ১৯ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার। খরচ করেছে ১৩ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলার। নেট আয় করেছে প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলার। ড. ইউনূস গ্রামীণ আমেরিকার একজন শেয়ার হোল্ডার হিসাবে তিনিও আয় করেছেন। একইসঙ্গে গ্রামীণ আমেরিকার চেয়াম্যান হিসেবে সম্মানী নিয়েছেন। এ অর্থ তার ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নে উল্লেখ করেছেন কিনা এ বিষয়টিও তদন্ত করছেন কর কর্মকর্তারা। সম্পাদনা: মোরশেদ