তামিমের দাদাও ৭১ সালে চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন
আজাদ হোসেন সুমন: পুলিশের অপারেশন ‘হিট স্ট্রং টোয়েন্টি সেভেন’ এ নিহত জঙ্গি মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীর দাদা মজিদ চৌধুরীও ছিলেন চিহ্নিত রাজাকার। জঙ্গিদের মূলহোতা তামিম আহমেদ চৌধুরী মূলত সিলেটের বাসিন্দা। ৩০ বছর বয়সী তামিম ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করে কানাডার উইন্ডসরে বসতি শুরু করে। এরপর সে সিরিয়ায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেয়। গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলায় ঘরছাড়া তরুণ-যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ১০ জনের যে প্রথম তালিকা দিয়েছিল, তাতে সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরীর নাম আসে। আইএস-এর বিভিন্ন প্রকাশনার উপর ভিত্তি করে তাকে সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক ধরা হয়। গুলশান হামলার অর্থ সহায়তা থেকে শুরু করে হামলার নেপথ্যে মূলনায়ক ছিল এই তামিম চৌধুরী। কল্যাণপুরে আস্তানা আবিষ্কার ও ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় আহত অবস্থায় গ্রেফতারকৃত জঙ্গি বাইক হাসানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে পুলিশ আরও জানতে পারে। তামিম চৌধুরী সম্প্রতি একাধিকবার কল্যাণপুরের তাজ মঞ্জিলে গিয়ে বৈঠক করেছে। ইতিমধ্যে এই মাস্টারমাইন্ড সীমান্তের ফোকর গলে একাধিকবার ভারতে যাতায়াত করেছে। জানা গেছে, তামিম চৌধুরী সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মজিদ চৌধুরীর নাতি। মজিদ চৌধুরী একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়দের তথ্য। তামিমের বাবা শফি আহমদ জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি সপরিবারে কানাডায় পাড়ি জমান।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে জেএমবির যে ভগ্নাংশটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী হয়ে জঙ্গি কর্মকা- চালাচ্ছে সে অংশের শীর্ষনেতা তামিম চৌধুরী। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী দেশে ফিরে আত্মগোপন করে জঙ্গি কর্মকা-ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারেও এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
শনিবার নারায়ণগঞ্জের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘তামিম চৌধুরী সিরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আরও কয়েকজনের সঙ্গে তামিম চৌধুরীই দেশীয় জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলা বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান জানিয়েছে, কল্যাণপুরে তাদের জঙ্গি আস্তানায় তামিম চৌধুরী, রিপন, খালিদ, মামুন, মানিক, জোনায়েদ খান, বাদল ও আজাদুল ওরফে কবিরাজ নামে ব্যক্তিরা নিয়মিত যাতায়াত করত। তারা তাদের ধর্মীয় ও জিহাদি কথাবার্তা বলে উদ্বুদ্ধ করত। প্রয়োজনী টাকা-পয়সা দিয়ে যেত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে রাকিবুল হাসান জানিয়েছিলেন, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ও সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সমর্থক তাদের এ কাজে অর্থ, অস্ত্র, গোলা-বারুদ, বিস্ফোরক দেওয়াসহ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা ও প্ররোচনা দিত। জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ‘জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ ও অর্থদাতাদের মধ্যে কিছু লোককে তারা শনাক্ত করেছেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বিভিন্ন ফোরামে বলেছেন, মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি চিহ্নিত করা হয়েছে, তারা পুলিশের নেটওয়ার্কের মধ্যেই আছে। ধরা যাচ্ছে না, কারণ তারা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে তামিম সম্প্রতি বুঝতে পারে সে গোয়েন্দা জালে আটকে গেছে। সে সীমান্ত গলিয়ে ভারতে যাওয়ার ব্যর্থচেষ্টা করে। অবশেষে গতকাল পুলিশের সফল অপারেশনে নিহত হয় এই মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি। সম্পাদনা: আ. হাকিম