নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে সরানোর বিষয়ে জনমতের বিপক্ষে কাজ করবে না আইন মন্ত্রণালয়। এছাড়া ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে- এই নির্দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। কমিটির ঘোষণা- আদালত সরাতে হলে লাশের ওপর দিয়ে সরাতে হবে, প্রয়োজনে অনশন করারও হুমকি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ও আইন মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। এ অবস্থায় সরকার সার্বিক দিক বিবেচনা করছে। এ নিয়ে কোনো আন্দোলন শুরু হোক সেটা চাইছে না সরকার।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার চিঠির বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় প্রথমেই রয়েছে- হাইকোর্ট ভবন থেকে বিচারাদালত না সরানো। প্রয়োজনে তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন, বোঝাবেন জনমত কী চাইছে। তারা আশা করছেন- প্রধান বিচারপতি বুঝবেন। তিনিও জনমতের বিপক্ষে যাবেন না।
এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা চিঠি পাওয়ার পর এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। দেখি কী করা যায়। এখান থেকে বিচারাদালত না সরানোর ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। তারা তাদের কথাগুলো তুলে ধরছে। আমরা সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করছি। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কথা বলা হবে।
প্রধান বিচারপতি তো জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথাই জানিয়েছেন। সেই হিসেবে না সরানোর অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করবো।
ট্রাইব্যুনাল সরানোর চিঠি প্রদান করাকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মনে করছে- এটা চক্রান্ত হতে পারে। এই কমিটির দাবি, বিচার শেষে হলে এই আদালতকে এই ভবনকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আর্কাইভ হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে।
কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির সুপ্রিম কোর্টের এই নোটিশকে দেখছেন- বিনামেঘে বজ্রপাত। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজকে কতটা গুরুত্বহীন মনে করেন তার সবশেষ উদাহরণ এই নোটিশ। এই অপরাধীদের চলমান বিচার এবং এই বিচারিক ভবনকে কেন্দ্র করে ৩০ লাখ শহীদ পরিবার ও বিচারবঞ্চিত পুরো জাতির আশা, অনুভূতি ও স্বপ্ন পদদলিত করবেন না বলেও প্রধান বিচারপতির প্রতি তিনি আহ্বান জানান। শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, এই জায়গাটির সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত। এই ভবনে বড় বড় মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার হয়েছে। এ কারণে এই বিচারের জায়গাটিকে নিশ্চিহ্ন করতে এখান থেকে ভবন সরিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা হচ্ছে।
সরকার সাবির্ককভাবে এই স্পর্শকাতর বিষয়টি মোকবেলা করতে চাইছে। এজন্য আইন মন্ত্রণালয় এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে তারা এই বিচারাদালত সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে কোনো তাড়াহুড়া করবে না। গণজাগরণ মঞ্চ যাতে কোনো ধরনের আন্দোলন না করে সেই ব্যাপারেও সুযোগ দিতে চাইছে না। সম্পাদনা: আ. হাকিম