বড় ছোটবেলা
ভীষণ টনসিল ব্যথা। সঙ্গে জ্বর। কমছে না সপ্তাহ গড়িয়ে যাবার পরও। বছর ছয়েকের আমার তেমন কোনো চিন্তাও নেই এ নিয়ে। জ্বরের কারণে খেলতে বাইরে যেতে পারছি না। এইটুকুই। কিন্তু তখন আমি আরেক খেলায় মত্ত। যে খেলাটি ভীষণভাবে আমার সৃষ্টি। সেই সৃষ্টির দাপটে জ্বর তেমন পাত্তা পাচ্ছে না।
মনে আছে, জ্বর না কমায় আবারও নিয়ে যাওয়া হলো ডাক্তার এর কাছে। বাড়ানো হলো এন্টিবায়োটিক এর কোর্স। এরপরও জ্বর তো রয়ে গেল ও এক সকালে সাঙ্গ হলো খেলা খেলা আনন্দ। জ্বর না কমার কারণ উদ্ঘাটিত হলো। এবং উদ্ঘাটন এর শতভাগ কৃতিত্ব বাবার। তার গোয়েন্দাগিরি স্বার্থক।
প্রতিদিন সকালে ক্যাপসুল মুখে পুরে রান্নাঘরে লুকিয়ে যেতাম সেটা তিনি আবিষ্কার করেছিলেন। এক সকালে জানালায় মুখ বাড়িয়ে বাবা দেখলেন ১০ তলার সানসেট জুড়ে ক্যাপসুলের মেলা।
অতঃপর আমি জর্জরিত প্রশ্নবানে। ছয় বছরের আমি তখনও অপরাধটি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। ইয়া লম্বা ক্যাপসুল আমার গলা দিয়ে নামে না। বরং এর চেয়ে জানালা দিয়ে সানসেটে ফেলে দেওয়াটা বেশি সহজ। আনন্দেরও বটে। লাল কালো ক্যাপসুলে রোদ পড়ে যখন চিকচিক করে, সেই সৃজন আমায় মুগ্ধ করত। ওষুধ খেয়ে সুস্থ হতে হবে এই ভাবনাকে অতিক্রম করেও এরপর তো ঠিক যা যা হবার কথা তাই তাই হলো। কড়া পাহারায় আমাকে ওষুধ সেবন করানো এবং আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম।
ভবিষ্যতকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে ঠিক এই মুহূর্তকে ভালোবাসতে পারার ক্ষমতা যেদিন আমরা হারাই, সেদিন আমরা বড়বেলায় পৌঁছে যাই। বড়বেলা জুড়ে শুধুই ভবিষ্যত এর বসতি।
আর যারা ভবিষ্যতের বসতিকে গুড়িয়ে দেয়, তারা চিরকাল ছেলেবেলায় থেকে যায়, সৃজন করে ‘আজ’ সৃজনশীল মানুষেরা জীবনভর ছেলেবেলায় বাস করেন। আমরা যারা বড় হয়ে যাই, ঈর্ষা করি ক্যাপসুলে রোদ মাখানোর খেলায় মেতে থাকা শিশুটিকে।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন