রিকু আমির : কৃষিপণ্য চাষের সময়ই সবচেয়ে বেশি রাসায়নিক মিশ্রণ দেওয়া হয় বলে জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচ)-এর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। গত এক বছরে উৎপাদন ও বিপণনের তিনটি পর্যায়ের কৃষি ও খাদ্য পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে আইপিএইচ।
গতকাল রোববার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে আয়োজিত গত এক বছরে খাবারের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. একেএম জাফরউল্লাহ।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কৃষক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে প্রতিটি উপাদানের ২৭টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে। এতে ৪০ ধরনের খাদ্য নমুনা পরীক্ষা করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, শুঁটকি, মুড়ি এবং গুঁড়া মরিচসহ অন্যান্য গুঁড়া মশলার ৪০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এসব খাদ্যে ৪৩ ধরনের অর্গান ফসফরাসের উপস্থিতি ও পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। শুঁটকিতে অর্গানোক্লোরিনের পেস্টিসাইডের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।
খেজুর, আঙ্গুর, আমে ফরমালিন, মুড়িতে ইউরিয়া এবং হলুদ ও মরিচে আফলাটক্সিন এবং নিষিদ্ধ সুদান রেডের উপস্থিতি পাওয়া যায় পরিচালিত পরীক্ষায়। ৩২৪টি নমুনাকে পরীক্ষা করে ৪৭টি নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিকের উপাদান পাওয়া গেছে। যা শতকরা ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এসব খাদ্যের মধ্যে ৩৪ শতাংশ ডাইমেথোট, ৩২ শতাংশ কুইনালফোস, ১৭ শতাংশ ক্লোরোপাইরোফস এবং মেলাথিওন, এথিলফেনিইন্ট্রিফেনি, ইথোপ্রোফস এবং মেটালিঙ্কির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এসব নমুনার মধ্যে কিছু খাদ্যে বিপদজনক মাত্রায় রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। আম, আঙ্গুর এবং খেজুরের সবগুলো নমুনাতেই ফরমালডিহাইটের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও সেগুলো আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বিপদজনক মাত্রায় ছিল না। তবে গুঁড়া মরিচের ৩টি নমুনা পরীক্ষায় নিষিদ্ধ রং সুদান রেড এবং ২টি নমুনায় আফ্লাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬-এর জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপের তত্ত্বাবধান করেন- আইপিএইচের ফুড সেফটি ল্যাবরেটেরির প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌস। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প অনুদানে এসব পরীক্ষা করা হয়। এবার বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে। তাই এ ধরনের জরিপের পরিধি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
পরিচালক ডা. জাফরউল্লাহ জানান, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে বর্তমানে বছরে ৪০ কোটি খাবার স্যালাইন প্রস্তুত ও বিতরণ করা হয়। এছাড়া আইভ ফু¬ইড, স্যালাইন, ব্লাড ব্যাগ তৈরি করে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া অত্যন্ত কমমূল্যে এখানে নানা ধরনের রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
এ সময় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ, ডা. কার্তিক চন্দ্র দাস, ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির গবেষক ড. মতিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা: সৈয়দ নূর-ই-আলম