মীর কাসেমের ভাগ্য নির্ধারণ কাল
এস এম নূর মোহাম্মদ : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত
জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। গতকাল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে রায় দেওয়া হবে আগামীকাল মঙ্গলবার।
কাল রিভিউ আবেদন খারিজ হলে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে মীর কাসেম আলীর। আর তিনি প্রাণ ভিক্ষা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে দ- কার্যকর করবে সরকার। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুই দফায় প্রায় ২ ঘণ্টা রিভিউ শুনানির পর আপিল বিভাগ রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করে দেন।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেনÑ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। কাসেম আলীর পক্ষে গতকাল রিভিউ শুনানি করেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানির পর আদালত থেকে বের হয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ নেই। কোনো সাক্ষীও সেটি বলেননি। আদালত বলেছেন, সেই সময়ের বই-পত্র থেকেই আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। আমরা বলেছি, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী যিনি নিজেকে জসিমের মামাতো বোন হিসেবে দাবি করেন, তিনি একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন স্বাধীনতার পর। কিন্তু তিনি সে পত্রিকায় জসিমের কথা বলেননি। আরও একটি বই প্রসিকিউশন থেকে দেওয়া হয়েছে, অ্যাডভোকেট শফিউল আলম লিখেছেন। সেখানেও জসিমের হত্যাকা- সম্পর্কে বলা হয়নি। তারপর আরও একটি পেপার চট্টগ্রাম থেকে দেওয়া হয়েছে। তবে জসিম কোথায় কীভাবে মারা গেছে, সেখানে বলা হয়নি। এমনকি মীর কাসেম আলী সম্পর্কেও তাতে কিছু বলা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে তাতে অন্তত এই অভিযোগের জন্য তার অপরাধ প্রমাণিত হয় না। তারপরও যদি আপনারা মনে করেন অপরাধ প্রমাণ হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদের নিবেদন থাকবে যেহেতু মীর কাসেম আলী সরাসরি জড়িতÑ এ কথা প্রমাণ হয়নি তাই ৩০২ ধারার বিধান অনুসারে মৃত্যুদ- দেওয়া উচিত হবে না। আমরা আরও বলেছিÑ আমাদের দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী মৃত্যুদ- দেওয়া হয়, যখন দেখা যায় আসামি অত্যন্ত দুর্ধর্ষ। তাকে ছেড়ে দিলে আবার একই ধরনের অপরাধ করবে। কিন্তু মীর কাসেম আলীকে যদি মৃত্যুদ- না-ও দেওয়া হয়, তাহলে তিনি এ ধরনের কোনো অপরাধ বাংলার মাটিতে করবেন এ রকম কোনো আশঙ্কা নেই। আর উনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সমাজের সেবা করেছেন।
খন্দকার মাহবুব বলেন, তার মনে যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকত যেÑ তিনি অপরাধ করেছেন, তাহলে তদন্ত চলার সময় তিনি বিদেশে গিয়েছিলেন, আর ফিরে আসতেন না। অথচ তিনি আবার দেশে এসে বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। সব কিছু বিবেচনা করে তাকে চরম দ- দেওয়া উচিত হবে না।
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আশা করি মীর কাসেম আলীর দ- বহাল থাকবে।
সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী