সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি অর্থমন্ত্রী-গভর্নর বৈঠক
জাফর আহমদ: সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ির মধ্যে অনুষ্ঠিত হলো অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের বৈঠক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে বেলা পৌনে ২টা থেকে শুরু করে এ বৈঠক চলে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান ও এসকে সুর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্য দিন বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদিকদের প্রবেশাধিকার থাকলেও গতকাল বৈঠক চলাকালে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, দুই ডেপুটি গভর্নরের চাকরির চুক্তি বাতিল, নতুন গভর্নর নিয়োগ ও নিয়োগের পর কর্মকর্তাদের মধ্যে যখন অস্থিরতা বিরাজ করছে এমন সময় অর্থমন্ত্রীর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। পাশাপাশি সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকারে কড়াকড়ির কারণে বিষয়টিতে সবার মনোযোগ কেড়েছে।
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিং-এর মাধ্যমে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারী হিসাব থেকে ৭০টি ভুয়া পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশনের (পিআই) ৪টি পিআইর বিপরীতে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকের চারজন গ্রাহকের হিসাবে পাঠানো হয়।
রিজার্ভ চুরির এ ঘটনার পর গত ১৫ মার্চ গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন আতিউর রহমান। নতুন গভর্নর হিসেবে সাবেক সচিব ও সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফজলে কবিরকে নিয়োগ দেওয়া হলেও বরখাস্ত করা হয় দুই ডেপুটি গভর্নরকে। খালি পদ পূরণ করতে সরকার গঠিত অনুসন্ধান কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুজন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের জন্য মেধার ভিত্তিতে ব্যাংকের দুজন নির্বাহী পরিচালকের নাম চূড়ান্ত করেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় শেষ পর্যন্ত তারা নিয়োগ পাননি। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সেই অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
দীর্ঘদিন ধরে দুই ডেপুটি গভর্নরের পদ খালি পড়ে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শীর্ষ পর্যায় থেকে নতুন কাজের নির্দেশনা আসছে দেরি করে। পাশাপাশি রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফজলে কবির গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার দফতরে ফাইলের স্তূপ জমতে থাকে বলে কর্মকর্তারাই অভিযোগ তোলেন।
এদিকে রিজার্ভ চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলে গুঞ্জন রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এমন ইঙ্গিত দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থাহীনতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আস্থাহীনতা এতটাই প্রকট হয়েছে যে, অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে একজনের অনুপস্থিতিতে তার কাজে অন্য কেউ সাহায্য করতে রাজি হচ্ছিল না। এসব ঘটনার মধ্যে অর্থমন্ত্রীর বাংলাদেশ ব্যাংক সফরে দৃষ্টি ছিল সংশ্লিষ্টদের। সম্পাদনা : মাহমুদুল আলম