ক্রমাগত অভিযানে তছনছ হয়ে যাচ্ছে জঙ্গি নেটওয়ার্ক
আজাদ হোসেন সুমন: গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এখন মারজান ও মেজর জিয়ার দিকে। র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ক্রমাগত অভিযানের মুখে তছনছ হয়ে যাচ্ছে তাদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক। তাদের অবস্থা এখন ‘ত্রাহি মধূসুদন’ যেকোনো সময় এরা ধরা পড়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ২ জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে পারলে জঙ্গিদের প্রাথমিক অধ্যায় শেষ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মারজান হচ্ছে গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পরিকল্পনাকারী আর মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় গত ৩ বছরে কমপক্ষে ১০ জন ব্লগার হত্যা করেছে। জঙ্গি দমনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা গতকাল রোববার আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, জিয়া ও মারজানের অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তারা অনেক দূর এগিয়েছেন। দুই কুখ্যাত জঙ্গিকে তারা গ্রেফতার করতে সক্ষম হবেন।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জের অভিযান থেকে তারা দেখেছেন, জঙ্গিরা সব সময় সঙ্গে গ্রেনেড ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখছে। পুলিশের প্রথম লক্ষ্য হলো জঙ্গিদের গ্রেফতার করা এবং তথ্য নেওয়া। কিন্তু জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করতে চায় না। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ কারণে পুলিশকে পাল্টা অভিযানে নামতে হয়। অভিযানের সময় জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করুক, পুলিশ সেটাই চায়। আবার তারা জীবিত অবস্থায় ধরা পড়লেও তথ্য দিতে চায় না। তারা বলে কিসের তথ্য আমরা এ নাফরমান প্রচলিত ধ্যান-ধারনায় বিশ্বাস করি না। আমরা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে কুরআনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালিত হবে। তাগুদ সরকারকে আমরা কোনো তথ্য দেবনা আমাদের হত্যা করুন, আমরা দ্রুত বেহেশতে চলে যাই।
নারায়ণগঞ্জের অভিযানের পর ঘটনাস্থলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, তামিম চ্যাপটার শেষ হয়েছে। অন্য জঙ্গিদেরও ধরার চেষ্টা চলছে। জঙ্গিদের নির্মূল করা হবে। একই দিন রাজশাহীর বাগমারায় এক জঙ্গিবিরোধী সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তামিমের চ্যাপটার শেষ হয়েছে। অচিরেই জিয়ার চ্যাপটার শেষ হবে। প্রশাসন তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের হামলায় দেশি-বিদেশি নাগরিক, পুলিশসহ ২২ জন নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারীরাও নিহত হন। এর এক সপ্তাহ পর ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর হামলা করে জঙ্গিরা। এ হামলার পিছনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম আসে তামিম চৌধুরীর। এরপর মারজানকেও পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ। ব্লগার খুনের ঘটনায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার প্রধান সৈয়দ জিয়াউল হকের নাম আসে । গত শনিবার নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানে তামিমসহ তিন জঙ্গি নিহত হন। অবশ্য এখন পর্যন্ত ওই দুজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন গতকাল বলেন, জঙ্গি দমনে তাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। জঙ্গিদের ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তারা পেয়েছেন। জঙ্গি যত বড় বা দুর্ধর্ষই হোক না কেন ধরা পড়তেই হবে। শিগগিরই আরও দুই জঙ্গির ‘চ্যাপটার ক্লোজ’ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এ দুই জঙ্গির একজন হলেনÑ গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার অন্যতম পরিকল্পক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল ইসলাম মারজান। আরেকজন সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়াউল হক জিয়া। পুলিশ মনে করছে, এ দুই জঙ্গিকে ধরতে পারলে আপাতত জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক তছনছ হয়ে যাবে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম